বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
কুমিল্লায় এখনো উত্তেজনা

আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসা নিয়েই জোড়া খুন

কুমিল্লা প্রতিনিধি

মুরাদনগর উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে কুপিয়ে ও জবাই করে ফারুক ও সাইদুল ইসলাম নামে আওয়ামী লীগের দুজন কর্মীকে হত্যার পর এলাকায় উত্তেজনা চলছে। নবীপুর (পশ্চিম) ইউনিয়নের রহিমপুর-নয়াকান্দি গ্রামে জোড়া খুনটি হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বালু ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড। পুলিশ মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নয়জনকে গ্রেফতার করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত ফারুক (২৫) মুরাদনগর উপজেলার রহিমপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে এবং সাইদুল ইসলাম (২৭) একই গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে ইউপি সদস্য আশরাফ বাদী হয়ে ২৯ জন এজাহার নামীয় ও ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। এদিকে বুধবার বিকালে কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ বিজ্ঞপ্তিতে জড়িতদের গ্রেফতার ও  বিচার দাবি করা হয়। জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও বালু ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থক মেম্বার আশরাফুল ইসলাম গ্রুপ বনাম কবির-আলাউদ্দিন- আনিস গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। প্রায় এক মাস আগে আশরাফ মেম্বার ১০ কেজি গাঁজাসহ কবির-আলাউদ্দিন-আনিস গ্রুপের অনুসারী একই গ্রামের হোরন মিয়ার ছেলে সাইদুরকে পুলিশে ধরিয়ে দেন, সে বর্তমানে কারাগারে। এ নিয়ে উভয় গ্রুপে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এ ছাড়াও চার দিন আগে আশরাফ মেম্বারের গোমতী নদীতে বালু ব্যবসার ড্রেজার স্থাপন নিয়ে ওই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে আলাউদ্দিন-আনিস গ্রুপের লোকজন আশরাফ মেম্বারের বালু ব্যবসার ড্রেজার কাজে নিয়োজিত কেয়ারটেকার রুবেলকে মারধর করে। খবর পেয়ে সেখানে আশরাফ মেম্বারের ভাতিজা সাইদুল ইসলাম গেলে আলাউদ্দিন-আনিস গ্রুপের কবির, আনিস, আলাউদ্দিন, আবু মুছা, শাহ আলম, কনু মিয়াসহ অন্যরা সাইদুলকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। এ খবর পেয়ে আশরাফ মেম্বার ও তার চাচাতো ভাই ফারুকসহ তাদের লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে ফারুককেও হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে আশরাফ মেম্বারসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিকালে আশরাফুল মেম্বার বাদী হয়ে রহিমপুর-নয়াকান্দি গ্রামের কবির হোসেন (৪৫), আলাউদ্দিন (৩৫), আনিস (২৯), আবু মুছা (২৭), শাহ আলম (৩২), কনু মিয়া (৩২), ফারুক মিয়া (২৩), জাকির হোসেন (৪৫), জাহের মিয়াসহ (৩৪) এজাহার নামীয় ২৯ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী আহত আশরাফ মেম্বার জানান, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রতিপক্ষ আলাউদ্দিন-আনিস ও তার লোকজনের সব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় একাধিকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়াও এক মাস আগে তাদের গ্রুপের গাঁজা সাইদুরকে ১০ কেজি গাঁজাসহ আটক করে পুলিশে দেওয়ায় আমার ওপর তারা ক্ষিপ্ত হন।’ তিনি আরও জানান, ‘কিছু দিন আগে আমার বালু ব্যবসার জন্য ড্রেজার স্থাপন করায় বিরোধের জের ধরে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটাতে গিয়ে আমার পরিবারের ২ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের পর গতকাল বিকালে দুজনের জানাজা শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মুরাদনগর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আনিস-আলাউদ্দিন গ্রুপের নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. আবদুল মোমেন জানান, ‘হত্যার বিষয়টি পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’

সর্বশেষ খবর