বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

রসুলপুরে জমেছে জামাইমেলা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

রসুলপুরে জমেছে জামাইমেলা

টাঙ্গাইলের রসুলপুরে জমেছে জামাইমেলা। গত মঙ্গলবার থেকে মেলা শুরু হয়েছে, চলবে আজকের দিন পর্যন্ত। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এবারও তিন দিনের মেলায় যুক্ত হয়েছেন অন্তত ৩০ গ্রামের লাখো মানুষ। মেলা উপলক্ষে এলাকার সব মেয়ের বররা শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসেছেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন তারা জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিঁড়া, মুড়ি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কেনেন। সরেজমিনে গতকাল মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দোকানিরা পসরা সাজিয়েছেন নানা জিনিসপত্রে, আর ক্রেতারা ভিড় জমিয়ে কেনাকাটা করছেন। ছোট ছোট ছেলে-মেয়ারা হই-হুল্লোড় করছে। আছে ছোট-বড় প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন। মেলার ব্যাপারে রসুলপুরের বাসিন্দা কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, ‘এ মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এ মেলা হয়ে আসছে। এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজাপার্বণের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত।’ পাশের গ্রাম শালিনার বাসিন্দা সাখওয়াত পারভেজ বলেন, ‘এক মাস থেকে এ মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। লোকজন ছুটি নিয়ে মেলা দেখার জন্য আসেন। আগে বয়স্ক লোকজন এই মেলা উপভোগ করতেন, এখন মধ্যবয়স্ক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা বেশি উপভোগ করেন। মেলায় মিষ্টি জাতীয় জিনিস বেশি বিক্রি হয়।’ জামাল হোসেন নামে রসুলপুরের এক জামাই বলেন, ‘আমি স্বাধীনতার আগে বিয়ে করেছি। প্রতি বছরই মেলায় আসি। শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে থাকতে তারা আগে থেকেই দাওয়াত দিতেন। এখন তারা বেঁচে নেই। শ্যালক-শ্যালকের বউরা এখন দাওয়াত দেয়।’ রসুলপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নবপ্রজন্ম সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মারুফ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এই মেলা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে দারুণ একটা প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎসবের আমেজ কিছুটা কম। মেলায় আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। এটা করে আমরা দারুণ আনন্দ পাই।’ মেলার আহ্বায়ক আতোয়ার রহমান বলেন, ‘এ মেলায় শতাধিক দোকান বসেছে। প্রায় ১৫০ জন স্বেচ্ছায় মেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। এ মেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্য ঐতিহ্যবাহী। মেলা শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা চলে এসেছেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করছেন। আমি ছোট বেলা থেকে মেলা দেখে আসছি। মেলার লাভের টাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।’

সর্বশেষ খবর