শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
মতবিনিময় সভায় হুঁশিয়ারি

জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব বাপ-দাদার বসতভিটা মাটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব বাপ-দাদার বসতভিটা মাটি

রাজধানীর মাদানী এভিনিউতে গতকাল মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জীবন দিয়ে হলেও বাপ-দাদার বসতভিটা রক্ষা করব। ৩ মে পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। তারপর প্রয়োজনে বসতভিটা রক্ষার জন্য ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হবে। গতকাল সন্ধ্যায় খন্দকার কমিউনিটি সেন্টারে এক মতবিনিময় সভায় বসতভিটা উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতারা এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব, গণমানুষের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছেন। অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি করতে কিছু কুচক্রী আমলা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। কিন্তু এ ষড়যন্ত্র সফল হবে না। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১ লাখ ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। রাজধানীর গরিব জোয়ারসাহারা, এল এ কেসে উলুন, ভোলা, সুতিভোলা, শাহজাদপুর, খিলক্ষেত, নূরেরচালা, কুড়িল, ভাটারা, নয়ানগর, কালাচাঁদপুর, জগন্নাথপুর, নর্দা, কুড়াতলী ও বাড্ডার ১৫ লাখ বাসিন্দা যে কোনো কুচক্রী মহলের অপতত্পরতা রুখে দেবে। আমাদের কেউ রোহিঙ্গা, উদ্বাস্তু কিংবা বিহারি মনে করলে ভুল করবেন। আমরা এখানকারই স্থায়ী বাসিন্দা। যে কোনো মূল্যে ঢাকার ডিসি এবং রাজউকের চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্রমূলক উদ্যোগ প্রতিরোধ করবই। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ২০০০ সালের ১২ মার্চ ১১৭ স্মারকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্রে ‘এসব এলাকার জমির খাজনা এবং নামজারির বিষয়ে আপত্তি করা হয়েছে। এ কারণে ওই এলাকার অধিগ্রহণকৃত জমির অবমুক্তকরণ গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত খাজনা কিংবা নামজারি কার্যক্রম করা যাবে না। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে এ এলাকার বাসিন্দারা। ‘বৃহত্তর ঢাকা জেলার ১৩৮/৬১-৬২, ৯১/৫৭-৫৮ ও ২৩/৬৬-৬৭ নম্বর এল এ কেসে উলুন, বাড্ডা, ভাটারা, জোয়ারসাহারা, ভোলা, সুতিভোলা মৌজায় হুকুম দখলকৃত জমির মধ্যে ১৩৮৫.২৮ একর জমি অবমুক্তির জন্য মতবিনিময়’ শীর্ষক ব্যানারে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ভাটারা ১০০ ফুট রাস্তার পাশে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে মতবিনিময় সভায় এলাকার কয়েক হাজার লোক উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে যে কোনো মূল্যে ১৩৮ নম্বর এলএ কেসের আওতাধীন সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য বাস্তুভিটা রক্ষা এবং জমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরশাদ সরকারের সময় যেমন অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন করে দাবি আদায় করা হয়েছিল এবারও সেভাবে আন্দোলন করা হবে। তখন শহীদ রায়হানের রক্ত বৃথা যায়নি। বসতভিটা উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির অন্যতম নেতা ও ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল আমীন খন্দকারের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বসতভিটা উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির অন্যতম নেতা ওসমান গনি, ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া, গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম হেদায়েত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুল, ভাটারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম ঢালী, ভাটারা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, বিশিষ্ট সমাজসেবক সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আলাউদ্দিন আলী, মারফত আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, ভাটারা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী আবু সাঈদ, ইউপি সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা মারফত আলী, শহীদুল্লাহ, সোলায়মান হোসেন, কাজী মো. শহীদুল্লাহ প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে শহীদুল আলম খন্দকার বলেন, দলমত নির্বিশেষে বসতভিটা রক্ষার জন্য আন্দোলনে মাঠে নামতে হবে। ভাটারা থানা আওয়ামী লীগ সর্বাগ্রে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে। বসতভিটা উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির অন্যতম নেতা কাউন্সিলর ওসমান গনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, মাননীয় নেত্রী আপনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আপনার উন্নয়নে দেশবাসী সন্তুষ্ট। কুচক্রী মহল আপনার উন্নয়ন ম্লান করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এলাকায় চোর ঢুকেছে। ঘুমিয়ে থাকলে চোর ধরা যাবে না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে আমার ঘরবাড়ি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ২০০০ সালের ১২ মার্চ ১১৭ স্মারকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্রে ‘এসব এলাকার জমির খাজনা এবং নামজারির বিষয়ে আপত্তি করা হয়েছে। এ কারণে ওই এলাকার অধিগ্রহণকৃত জমির অবমুক্তকরণ গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত খাজনা কিংবা নামজারি কার্যক্রম করা যাবে না।’ অথচ এটি অনেক আগেরই মীমাংসিত একটি বিষয়। বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা একাধিক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মীমাংসিত। গেজেট প্রকাশের জন্য যদি দায়ী হয়, তাহলে বিগত সরকারগুলো হবে। এখন এ এলাকার জনগণ কেন ভোগান্তিতে পড়বে? ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার জনদরদি সরকার। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তিনি জনগণের সুযোগ-সুবিধা বোঝেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকার কয়েকজন আমলা এ চক্রান্তে লিপ্ত। আমি রাজউক চেয়ারম্যান ও জেলা  প্রশাসককে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আপনাদের চক্রান্ত সফল হবে না। আগামী ৩ মে পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। এরপর প্রয়োজনে রামপুরা থেকে খিলক্ষেতের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানী ঢাকাকে অচল করে দেব। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মারফত আলী বলেন, অতীতে বাড্ডা, নতুনবাজার, ভাটারা, খিলবাড়িরটেক, নয়ানগর, কালাচাঁদপুর, জোয়ারসাহারা, খিলক্ষেত, কুড়িল, কুড়াতলী এলাকার অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি দুজন প্রেসিডেন্ট অবমুক্ত করে চিঠি ইস্যু করেছিলেন। এখন সেই সম্পত্তি অবমুক্ত নয় বলে ডিসি এবং রাজউক চেয়ারম্যান বলছেন। তা হলে আমরা কি প্রশ্ন করতে পারি না, এদেশে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী বড়, না ডিসি-চেয়ারম্যান বড়? হয়তো তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করছেন। হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানেন না। জানলে অবশ্য ওদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। স্থানীয় মেম্বার ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, আমরা অধিগ্রহণের যাঁতাকলে পড়ে আর কত নিগৃহীত হব। এক সময় বনানীতে ছিলাম। এরপর গুলশানে এলাম। গুলশান থেকে বিতাড়িত করে ভাটারা, বাড্ডা কিংবা জোয়ারসাহারা পাঠানো হলো। এখন সেখান থেকেও আমাদের বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। শেষ সম্বল রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আমরা রাস্তায় নামব। স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল্লাহ বলেন, জমি অবমুক্ত করার পর আমরা রাজউক থেকে নকশা নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছি। নিজেদের নামে নামজারি করে খাজনা পরিশোধ করে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে সবাই বসবাস করছি। অথচ ডিসি এবং রাজউকের চেয়ারম্যান হঠাৎ করে আমাদের সুখের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। তারা কোন আইনে আমাদের জমিজমা অধিগ্রহণকৃত বলে নতুন ফতুয়া দিচ্ছেন সেটা আমাদের জানা নেই। তবে এ নিয়ে তারা বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরাও ওদের অপসারণ এবং বিচার চেয়ে রাজপথে নামব। গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল্লাহ হেদায়েত বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন আর পিছু হটার সময় নেই। নিজেদের বসতভিটা রক্ষার জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত রয়েছি। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুল বলেন, আমরা গুলশান, বনানী থেকে বিতাড়িত হয়েছি। এখন কালাচাঁদপুর-ভাটারা এলাকা থেকে বিতাড়িত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে রাস্তায় বসে যাব। নিজেদের বসতভিটা নিতে দেব না। ভাটারা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, আমাদের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে। আগের মতো আমাদের এখনো আন্দোলন করতে হবে। এই দুষ্টু কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে আমরা লড়ে যাব। সমাজসেবক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাপ-দাদার বসতভিটা কুচক্রী মহলের হাতে তুলে দিতে পারি না। প্রয়োজনে রায়হানের মতো জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছি। ভাটারা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী আবু সাঈদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে বিতর্কিত করতে ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১ লাখ ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। পাকিস্তানি শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছি। প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ করব। অত্র এলাকার ১৬ লাখ মানুষ প্রতিরোধ শুরু করলে সরকারের কয়েকজন দুষ্টু আমলা পিছু হটতে বাধ্য হবেনই। অন্যান্য বক্তা বলেন, রাজউক চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা হঠকারী  সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানেন না। কারণ তিনি জনগণের জন্য রাজনীতি করেন। জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না। আজকের পর আশা করি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আসবে। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর