সোমবার, ১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

পণ্যমূল্য বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানোর পাঁয়তারা!

সিন্ডিকেটের কব্জায় চাকতাই-খাতুনগঞ্জ বাজার

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়েছে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নানা প্রস্ততি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে রমজান শুরুর আগেভাগেই পরিকল্পিতভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিনি, ছোলা, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব পণ্যমূল্য মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি রমজানে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকদের ওপর প্রশাসনের নজরদারি থাকে বেশি। তাই এবার চাকতাই-খাতুনগঞ্জের সিন্ডিকেটগুলো কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। এর অংশ হিসেবে প্রশাসনকে ধোঁকা দিতে রমজানের আগেই মণপ্রতি পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। অজুহাত হিসেবে ডলারের মূল্য এবং বুকিং মূল্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যে পরিমাণ ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে রমজানের পরও বেশকিছু দিন চলবে। তাই ভোগ্যপণ্যের ঘাটতির প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া এখন যদি কেউ পণ্য আমদানির জন্য বুকিং দেয়, তাহলে পণ্যগুলো দেশে আসবে আরও এক-দেড় মাস পর। তাই এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি হলেও তাতে স্থানীয় বাজারে প্রভাব পড়ার প্রশ্নই আসে না।’ এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের চিনি সিন্ডিকেটে রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোই দেশের চাহিদার অর্ধেকের বেশি চিনি নিয়ন্ত্রণ করে। সিন্ডিকেটটি গত রমজানে বাজার কারসাজি করে কমপক্ষে ৬০০ কোটি টাকা ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারও শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে রমজানের আগেই মণপ্রতি দাম দেড়শ-দুইশ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া রমজানের আগে ছোলা, ভোজ্যতেল, খেজুর সিন্ডিকেটগুলোও সক্রিয় রয়েছে। তারা রমজানকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে আগেভাগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে রকম ভেদে প্রতি মণ (৩৭.৩২০ কেজি) ২৭৫০ থেকে ২৮৫০ টাকা, যা একমাস আগে ছিল ২৪৫০ থেকে ২৫০০ টাকা। পাইকারি বাজারে বর্তমানে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ (৩৭.৩২০ কেজি) ২২৫০ টাকা থেকে ২৩৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ২১৫০ টাকা। সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২৮৫০ টাকা এবং পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ২৫৬০ টাকা। দু মাস আগে যা ছিল যথাক্রমে ২৭৫০ টাকা ও ২৫০০ টাকা। এদিকে বাজার কারসাজিদের নতুন কৌশলের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফিন বলেন, ‘বাজার কারসাজি করে যাতে কেউ ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে—সেদিকে নজর রেখেছে প্রশাসন। কারসাজি রোধ করতে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে জেলা প্রশাসন।’ এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম তালুকদার বলেন, ‘রমজানে যাতে সিন্ডিকেট করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পারে এজন্য আগে থেকেই মনিটরিং করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিং করতে চেম্বার থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি চেম্বার থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর