সোমবার, ১ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিজেই রোগাক্রান্ত মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নিজেই রোগাক্রান্ত মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল

হাসপাতালের ভিতরে বৃষ্টির পানিতে ভাসে মানুষের বর্জ্য। ময়লার স্তূপ থেকে আসা দুর্গন্ধে নাকে কাপড় চেপে যাতায়াত করে মানুষ। কম্পাউন্ডের ভিতর ঘোরাফেরা করে গরু, ছাগল, কুকুর। একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। নেই আইসিইউ। এই হলো ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের চিত্র।

একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সৈয়দ আহসান তৌহিদ বলেন, ‘হাসপাতালের এরকম পরিবেশ দেখে প্রথম দিন কাজে যোগদান করে আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর এত সংকট যে, এই অল্প জনবল দিয়ে হাসপাতাল ভবনের ভিতরে পরিষ্কার রাখা কঠিন।’ সরেজমিন গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ঘড়িতে  বেলা ১১টা পার হতেই লম্বা হতে থাকে কুকুরের কামড় আর বিড়ালের আঁচড়ে আহত রোগীর সংখ্যা। একজন নার্স পরিষ্কার করছিলেন রোগীদের ক্ষতস্থান। এরপর ইনজেকশন দেওয়ার পালা। কিন্তু মাত্র দুজন মিলে এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। অন্যদিকে রোগীর লাইন পৌঁছে গিয়েছিল গেটের বাইরে। হঠাৎ করে হামের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী ভর্তি হয়েছে দ্বিগুণ। প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে দেড়শ রোগী আসছে হামে আক্রান্ত হয়ে। কিন্তু এত রোগীর বিপরীতে চিকিৎসক মাত্র একজন। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে রোগাক্রান্ত মানুষের। জানা গেছে, এই বিশেষায়িত হাসপাতালে নেই আইসিইউ। একবার আইসিইউ করার পরিকল্পনা নিয়ে কেনা হয়েছিল যন্ত্রপাতি। কিন্তু জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় বস্তাবন্দী থেকেই নষ্ট হচ্ছে লাখ টাকার যন্ত্রপাতি। তাই কোনো রোগীকে যদি আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে দৌড়াতে হয় অন্য হাসপাতালে। আর রোগী নিয়ে যাওয়ার একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটিও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তাই ঝুঁকি বাড়ছে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। এ দিন দেখা যায়, ছেলের শরীরে হাম ওঠায় তাকে সংক্রামক হাসপাতালে ভর্তি করেছেন কাকলীর ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে ভর্তি করার পর ওর ফুফু দেখতে হাসপাতালে এসেছিল। ছেলেকে দেখে হাসপাতালের গেট দিয়ে বের হতে গেলে আম গাছে ছোড়া ঢিল লেগে তার মাথা ফেটে যায়। এরপর তাকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ হাসপাতালের ভিতরে ক্রিকেট খেলে আর আম গাছে ঢিল মারে পাশের বস্তির ছেলেরা। শুনেছি এর আগেও অনেকে এরকম ঘটনার শিকার হয়েছেন।’

এ ব্যাপারে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মো. শাহআলম তালুকদার বলেন, ‘মাত্র ২০ জন চিকিৎসক, ৬৪ জন নার্স আর ৩০ জন কর্মচারী দিয়ে এই হাসপাতাল চলছে। আমি চাইলেও এই জনবলে বাইরের দারোয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা অন্য কাজে লোক লাগাতে পারি না। আর অন্য কাজে লাগালে মানুষ যেটুকু সেবা পাচ্ছেন তাও দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আমরা এই সার্বিক সমস্যা জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর