বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে সভাপতি ও সম্পাদক করে কায়েতপাড়া যুবলীগের কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। আর এ কারণে হতাশ কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ২২ মামলার আসামি সফিকুর রহমান বাদলকে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং চারটি হত্যাসহ ৩১ মামলার আসামি মোশাররফ হোসেন মোশাকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যুবলীগের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কমিটি গঠন করায় মাঠপর্যায়ের সাধারণ ত্যাগী নেতারা পদবঞ্চিত হয়ে ফুঁসে উঠেছেন। জানা গেছে, রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকার তিনটি হত্যাসহ ২২ মামলার আসামি সফিকুর রহমান বাদলকে সভাপতি ও নাওড়া এলাকার ত্রাস চারটি হত্যাসহ ৩১ মামলার আসামি মোশা বাহিনীর প্রধান মোশাররফ হোসেন মোশাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সফিকুর রহমান বাদলকে দেড় বছর আগে র‌্যাব বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। সন্ত্রাসী বাদলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে। দুই বছর আগে র‌্যাবের মামলায় কয়েক মাস জেল খেটেছেন বাদল। অন্যদিকে রূপগঞ্জের অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী চারটি হত্যাসহ ৩১ মামলার আসামি মোশা বাহিনী প্রধান মোশাররফ হোসেন মোশা। মোশাররফ আট মাস ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক রয়েছে। তবে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর রূপগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহড়া দিচ্ছে সে। স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার নাওড়া এলাকায় গত কয়েক বছরে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মোতালিব মিয়ার ছেলে ছিঁচকে চোর মোশাররফ নিরীহ মানুষের জমি দখল শুরু করে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন ভোল পাল্টে ওই দলের কর্মী বনে যায় সে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে যুবলীগ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। অবৈধ উপায়ে মূলত জমি দখল করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় মোশা। এর পরই গঠন করে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। বর্তমানে ৩০০ অস্ত্রধারীর একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে এই মোশাররফ। এ বাহিনী এলাকায় চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করলেও সাধারণ মানুষের জমি দখল করাই মোশাররফের প্রধান পেশা। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করতে এ বাহিনী কয়েক দিন পর পর ত্রাস সৃষ্টি করে। কেউ এর প্রতিবাদ করতে গেলেই মামলা, হামলা, মারপিট বা হত্যার শিকার হতে হয় প্রতিবাদকারীকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একসময়ের ছিঁচকে চোর মোশাররফ ছিনতাই, ডাকাতি করে হাত পাকিয়ে এখন সন্ত্রাসীদের গডফাদার হয়েছে। তার নির্দেশ ছাড়া এলাকার কোথাও কোনো অপকর্ম ঘটে না।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যুবলীগের নতুন কমিটির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ একতরফাভাবে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা আ. আউয়াল বলেন, ‘রূপগঞ্জের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যুবলীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে। এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। যুবলীগের অনেক নেতা-কর্মী হতাশ ও ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।’ এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজানহান ভূঁইয়া বলেন, ‘রূপগঞ্জে যুবলীগের কমিটি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। তবে খবর পেয়েছি রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এ কারণে রূপগঞ্জের যুবলীগের মাঠের নেতা-কর্মীরা চরম হতাশ।’

সর্বশেষ খবর