শিরোনাম
সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রশ্ন ফাঁস গলার ফাঁস

আকতারুজ্জামান

প্রশ্ন ফাঁস গলার ফাঁস

প্রাথমিক সমাপনী থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন গলায় ফাঁসের মতো। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট, এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যায়। বিসিএস থেকে শুরু করে সরকারি নিয়োগের বড় অংশই ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। প্রতারণা চক্রকে ধরতে তৎপরতার ঘাটতি নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রক্রিয়া। এ নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বিগ্ন। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব প্রশ্ন ফাঁসকে গুজব বলে অভিহিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলা মিডিয়ামে যেমন প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে, তেমনি ফলাফলের মান নিয়েও প্রশ্ন থাকে। এর কারণ হচ্ছে, প্রশাসনের যারা বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত, তারা এগুলো নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। সত্যি বলতে, বাংলা মিডিয়াম তেমনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না আমাদের কাছে। বাংলা মিডিয়ামে সরকারের নজরদারি কম। তবে ইংলিশ মিডিয়ামে নজরদারি তুলনামূলক বেশি। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বাংলা মিডিয়ামের একাডেমিক সিলেবাসে মাঝেমধ্যেই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পাঠ্যবইও পরিবর্তন করা হচ্ছে। এবার পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা হলো। শিক্ষামন্ত্রী বললেন, ভালোভাবে মূল্যায়নের কারণে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার কিছুটা কমেছে। তাহলে আগের বছরগুলোতে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের নম্বরগুলো সহজভাবে পাওয়া ছিল! এখানে আসলে সরকারের গাফিলতি রয়েছে। আগের বছর পাস করা আর এবার পাস করা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট তো পরিবর্তন হয়নি। তাহলে মূল্যায়নের কথা বলে এদের কেন কম নম্বর দেওয়া হবে? সত্যি বলতে, কর্তৃপক্ষের জবাবদিহির অভাব রয়েছে। শাস্তির ভয় নেই তাদের। পাঠ্যবই-ই বারবার কেন বই বদলাতে হবে, এটি হতে দেওয়া যায় না। শিক্ষার মূলধারা হচ্ছে বাংলা মাধ্যম। এ মাধ্যমে সরকারকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অনেক ত্রুটি রয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, ছাপানো, বণ্টনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার মধ্যে দুর্বলতা ও সমস্যা রয়েছে। প্রশ্নফাঁস খুবই দুঃখজনক। কিন্তু এটি যে হচ্ছে তা অস্বীকারের উপায় নেই। যখন শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়, তখন আমরা দেখি এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। সমস্যা অনুধাবন করতে হবে। প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ থাকলে সরকারকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া আমাদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাও প্রশ্নফাঁসের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে চান। এটি ঠিক নয়। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা না হলে প্রশ্নফাঁস বন্ধ হবে না। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে যখন কেউ শিক্ষক হন তখন তার কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। এমন শিক্ষকরা প্রশ্নফাঁস করেন।

বাংলা মিডিয়ামে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ বরাবরই পাওয়া যায়। যথাযথ নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। যাদের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নেই, তারা শিক্ষক হয়ে গেলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে নামেন।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার ব্যাপ্তি সারা দেশ হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রশ্নফাঁস এসবের মধ্যে একটি। সারা দেশ সামাল দেওয়া খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস করা হচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে নৈতিকতার গুণ থাকতে হবে। তাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রশ্নফাঁস বন্ধে সরকারের আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করতে হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলা মিডিয়ামে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর ব্যাপ্তি সারা দেশ নিয়ে। বাংলা মাধ্যমে যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, ইংরেজি মাধ্যমে এর দুই থেকে তিন শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী মাত্র। তবে ইংরেজি মাধ্যম যে তুলসী পাতা আমি তেমনটা বলব না। ছোট্ট পরিসরের আয়োজন হওয়ায় অনেকটাই ঝামেলামুক্ত এটি। বিজি প্রেসে দায়িত্বপ্রাপ্তদের ফোন ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি বরাবরই কিছু শিক্ষকের জন্য সবার বদনাম হচ্ছে। আমি বলতে চাই, শিক্ষকদেরই প্রশ্নফাঁস বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষকদের অনেক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের শিক্ষক নেতাদের প্রশ্নফাঁস বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশ্নফাঁস বন্ধে সবার এক হতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর