সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণ

এখনো গ্রেফতার হয়নি কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ডেকে নিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ধর্ষণের শিকার ওই দুই ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। তবে পুলিশের দাবি, আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক তাদের গ্রেফতার করা হবে। এদিকে ওই দুই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন ডা. নিলুফার ইয়াসমিন, ডা. কবির সোহেল, ডা. মমতাজ আরা ও কবিতা সাহা। ইতিমধ্যে গতকাল শ্লীলতাহানির শিকার দুই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা ঢামেক ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তাদের ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর তা পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ড এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন দিতে ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে। তিনি জানান, ওই দুই ছাত্রীর বায়োমাইক্রোলজিক্যাল টেস্ট, রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করানো হয়েছে। ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে ওই দুই ছাত্রীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে আসেন বনানী থানার নারী পুলিশ। এর পরই তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের হওয়ায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া কঠিন হবে। তাই বিষয়টি তথ্য প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল।

শনিবার বনানী থানায় ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রীর একজন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফায়েত আহমেদ, তার বন্ধু নাঈম আশরাফ, সাদনান সাকিফ, সাফায়েতের গাড়িচালক বিলাল হোসেন, দেহরক্ষীকে (অজ্ঞাত) আসামি করা হয়েছে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে উপর মহলে মোটা অঙ্কের টাকা খরচের অভিযোগ উঠেছে। আসামিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। আসামিদের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার কারণে পুলিশ তাদের নির্দোষ প্রমাণে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদ জানান, আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। এ জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। প্রভাবশালী হওয়ায় আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, আমরা শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

অভিযোগকারী দুই ছাত্রী সাংবাদিকদের জানান, ২৮ মার্চ বনানীর ব্লক-কে, রোড-২৭, হাউস-৪৯-এর ‘দি রেইনট্রি ঢাকা’ হোটেলের একটি কক্ষে সারা রাত তাদের আটকে রেখে ধর্ষণ করেন সাফায়েত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালান তারা। নির্যাতন শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার সময় তাদের হুমকি দেওয়া হয়, এ ঘটনা কাউকে বললে তাদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে। লাশ গুম করা হবে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২৮ মার্চ ওই দুই ছাত্রীকে তাদের বন্ধু সাফায়েত একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াত করেন। সাফায়েতের দাওয়াত পেয়ে দুই ছাত্রী ওই হোটেলে যান। সেখানে বন্ধু সাফায়েত ও নাঈম তাদের আটকে রেখে ধর্ষণ করেন, দুই ছাত্রী বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় শনিবার ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন। ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথাও বলেছে। এদিকে ধর্ষকদের বাঁচাতে বনানী থানার ওসিসহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা আসামিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রী। এ ব্যাপারে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মামলা ধামাচাপা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর