শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

সামাজিক নিরাপত্তায় একই প্লাটফর্ম

মানিক মুনতাসির

সামাজিক নিরাপত্তায় একই প্লাটফর্ম

অনিয়ম, দুর্নীতি রোধে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের উপকারভোগীদের একটি স্বচ্ছ, পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনডিআই) ভেরিফিকেশন সাপেক্ষে প্রথমে একটি সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন করা হবে। এতে দরিদ্র, বিধবা নারী, সচ্ছল-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, দরিদ্র মা, বয়স্ক নাগরিকসহ সব উপকারভোগীকে একই প্লাটফর্মে আনা হবে। এই ডাটাবেজ তৈরির জন্য আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে পৃথক বরাদ্দও রাখা হবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।

সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে সব ধরনের ভাতার পরিমাণ এবং উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বছরে দুটি উৎসব ভাতাও দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসছে বাজেটে। শুধু তাই নয় এই ভাতা চলতি অর্থবছর থেকেই কার্যকর দেখানো হবে।

অর্থবিভাগের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আরও প্রায় ৭ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উপকারভোগীর আওতায় আনা হচ্ছে। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, হিজড়াসহ বিভিন্ন খাতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। টাকার পরিমাণও ক্ষেত্রভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ছে। বাজেটে উপকারভোগীর সংখ্যা ও টাকার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ দরিদ্র লোকের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটে ২ লাখ অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। এখন থেকে ১০ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব ভাতাও যোগ হবে মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধায়। এ জন্য চলতি বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। বয়স্কভাতার সুবিধা ভোগ করছেন ৩১ লাখ ৫০ হাজার জন। বাজেটে বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ বাড়ানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছর বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৫ লাখে। প্রতি মাসে জনপ্রতি ৫০০ টাকা হারে বয়স্কভাতা সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী বাজেটে এর পরিমাণ ৬০০ টাকা করা হচ্ছে।  বর্তমানে ১১ লাখ ৫০ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার বাড়ানো হচ্ছে। এ খাতের সুবিধাভোগীরা মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছর এ ভাতার পরিমাণ ৬০০ টাকা করা হচ্ছে। দেশের অসচ্ছল প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় রয়েছে। এ সংখ্যা ৮ লাখ ২৫ হাজার করা হচ্ছে। অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতাও বাড়ছে ১০০ টাকা। এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৫০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা এবং উচ্চ স্তরে ১ হাজার ২০০ টাকাই রাখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫ হাজার করে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার করা হচ্ছে। অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিসেবে হিজড়াদের (তৃতীয় লিঙ্গ) জীবনমান উন্নয়নে ভাতা ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। বেদে ও অনগ্রসর শ্রেণির মাসিক ভাতা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। ভাতা বাড়ার পাশাপাশি এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ৬ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্তদের আর্থিক কর্মসূচির বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এটি ৩০ কোটি টাকা রয়েছে। আসন্ন বাজেটে তা ৫০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চা শ্রমিকদের ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মায়েদের ভাতাও বাড়ানো হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর