শিরোনাম
সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝুঁকিতে সাইবার নিরাপত্তা

মোবাইল ঝুঁকিতে শীর্ষে বাংলাদেশ, ৫২ শতাংশ ব্যাংকিং তথ্য অনিশ্চিত

জিন্নাতুন নূর

সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ঝুঁকিতে আছে দেশের ব্যাংকিং খাত, সরকারি-বেসরকারি খাত, অনলাইনভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইট ও মেইল অ্যাকাউন্ট। গবেষণা বলছে, সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থার দুর্বলতার জন্য মোবাইল সাইবার ঝুঁকিতে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া একই কারণে দেশের ৫২ শতাংশ ব্যাংকিং তথ্য নিরাপত্তাঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সাইবার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে নতুন করে চিন্তায় ফেললেও এ বিষয়ে এখনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

এরই মধ্যে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রতিবাদ করার জন্য বাংলাদেশি বিভিন্ন হ্যাকার গ্রুপ দেশের বাইরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সাইট হ্যাক করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশেরও বেশ কয়েকটি সাইট হ্যাক করেছে হ্যাকাররা। তারা বিভিন্ন সময় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও চালিয়ে যাচ্ছে। হ্যাকারদের দখলে চলে যাচ্ছে ব্যক্তির ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট। আর প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর চুরি, ব্ল্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি এবং উসকানি দেওয়ার মতো অপরাধও ঘটছে। এর মাধ্যমে একদিকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অবকাঠামোকে যেমন আক্রমণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে বিঘ্ন ঘটছে ব্যক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।

কিন্তু এত কিছুর পরও বাংলাদেশে এখনো সাইবার ফরেনসিক চালু হয়নি। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ল্যাব স্থাপন করার চিন্তাভাবনা চলছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকার আলাদা সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট তৈরি করতে যাচ্ছে। আর এর আওতায় কাজ করবে একাধিক কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম।

সাধারণত সাইবার সিকিউরিটির দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা ভাইরাস আক্রমণ করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও কোনো ওয়েবসাইট হ্যাক করে অপরাধ করছে। আবার জাঙ্ক মেইলের মাধ্যমেও ভুয়া আইডি ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালিয়েও সাইবার হয়রানি করা হচ্ছে। আবার লগইন বা অ্যাকসেস তথ্য চুরি করে ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করা হচ্ছে। ইন্টারনেটে তথ্য চুরি করে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অর্থ সরানো হচ্ছে। আবার ক্রেডিট কার্ড নম্বর চুরি করেও গোপনে অনলাইন ব্যাংক থেকে হ্যাকাররা টাকা চুরি করছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছর সরকারি-বেসরকারি কাজগুলো ডিজিটালাইজেশন হওয়ায় ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং চালু হওয়ায় সাইবার অপরাধের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে ঝুঁকিতে আছে ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তা। যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল সেখান থেকে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ও ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ক্যাসপারস্কির ২০১৫ সালের চূড়ান্ত ল্যাপ রিপোর্ট ‘আইটি থ্রেট ইভোলিউশন ইন কিউ থ্রি টু থাউজেন্ড ফিফটিন’ অনুযায়ী, মোবাইল সাইবার ঝুঁকিতে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। এখানে প্রতি চারটি ডিভাইসের অন্তত একটি ভাইরাসে আক্রান্ত। আর ২১৩টি দেশের মধ্যে কম্পিউটারে ভাইরাসের আক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম। এ ছাড়া ‘আইটি অপারেশনস অব ব্যাংক’ শীর্ষক এক গবেষণার তথ্যে, দেশের ৫২ শতাংশেরও বেশি ব্যাংকিং তথ্য নিরাপত্তাঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ খুবই উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ও ৩৬ শতাংশ উচ্চ নিরাপত্তাঝুঁকিতে।

আরেক গবেষণায় উল্লেখ আছে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীর ৭৩ শতাংশই সাইবার অপরাধের শিকার। আর শতকরা ৪৯ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী সাইবার হয়রানির শিকার। এমনকি সাইবার হয়রানি থেকে সুরক্ষায় গঠিত হেল ডেস্কেও অভিযোগকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর