শিরোনাম
সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - আনিসুল হক

প্রধান লক্ষ্য এলাকার উন্নয়ন আর কর্মসংস্থান

নিজামুল হক বিপুল

প্রধান লক্ষ্য এলাকার উন্নয়ন আর কর্মসংস্থান

আইনমন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রবীণ আইনজীবী আনিসুল হক বলেছেন, তিনি নিঃস্বার্থভাবে এলাকার জন্য কাজ করতে চান। গত ৬৬ বছরে তার নির্বাচনী এলাকায় কেউ মন্ত্রী হননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬৬ বছর পর এ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন হলো। এর আগে যারা এমপি নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন, তাদের দুর্নীতির কারণে এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে কসবা-আখাউড়ার উন্নয়ন হয়নি। এখন গ্রামেগঞ্জে রাস্তাঘাট পাকাকরণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ৭০০ তরুণ-যুবকের। কসবা-আখাউড়া নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন রাজনীতিতে একেবারেই নতুন মুখ প্রবীণ এই আইনজীবী। সম্প্রতি নিজ নির্বাচনী এলাকা কসবার গ্রামের বাড়িতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আনিসুল হক এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আমাকে এ এলাকার জন্য মনোনীত করলেন, আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম আমার পেশার পাশাপাশি রাজনীতি করব এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার জন্য কাজ করব। আমার এই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ জনকল্যাণের জন্য। জনগণের জন্য। আমি বাড়িয়ে বলতে চাই না। আমার উদ্দেশ্যই ছিল মানুষের উপকার করা। সে কারণেই আমি এখানে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আগের সরকারগুলোর কথা বলব না, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর দেশের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করেছেন এবং অন্যান্য উপকরণ দিয়েছেন। কিন্তু আমি কসবা-আখাউড়ায় এসে দেখলাম, সেই টাকার এবং সেই উপকরণগুলোর সদ্ব্যবহার করা হয়নি। টাকাটা জনগণের কাজে ব্যবহার হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই কসবা-আখাউড়ার উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। অথচ কসবা-আখাউড়ার যথেষ্ট উন্নয়ন করার জায়গা ছিল। আপনারা আজকে কসবা-আখাউড়ায় যেসব রাস্তাঘাট দেখছেন, সেগুলো এ রকম ছিল না। আমি মনে করলাম, মানুষের উপকার করতে গেলে এগুলোর উন্নয়ন করতে হবে। আপনারা দেখে থাকবেন, কসবা উপজেলা সদরে একটি সেতু করা হয়েছে। সেটি আমি এ এলাকার জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগেই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অর্থায়নে করে দিয়েছি। এলাকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কসবা থেকে কুটি চৌমুহনী বাজার পর্যন্ত সড়কটি ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে করিয়ে দিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি উন্নয়ন কাজ করার। আরও উন্নয়ন করার আছে। কারণ উন্নয়ন কখনো থেমে থাকে না। কেউ যদি বলে উন্নয়নের কাজ শেষ, আর উন্নয়ন করার কিছু নেই, এ কথা বোধহয় সঠিক নয়। উন্নয়ন হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া। আজ ধরেন আপনি একটা রাস্তা করলেন। সেই রাস্তা ব্যবহার হবে। ব্যবহার হলে ক্ষয় হবে। ক্ষয় হলেই আবার সেটি দুই-তিন বছর পর মেরামত করতে হবে। অথবা নতুন করে করতে হবে।’ আনিসুল হক বলেন, ‘আমি প্রথমেই জানার চেষ্টা করেছি, কসবা-আখাউড়ার মানুষের মৌলিক চাহিদা কী। তাদের প্রথম চাহিদা হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়া। দ্বিতীয় চাহিদা হচ্ছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কর্মসংস্থানে আমাদের দেশে যে কালচার, সেখানে সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের একটা ঝোঁক থাকে। আমি চেষ্টা করেছি, কসবা-আখাউড়ার মানুষকে চাকরি দিয়ে তাদের পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনার। গত তিন বছরে আমি বিভিন্ন সরকারি দফতরে ৬৩৪ জনকে চাকরি দিয়েছি। আমার এই তিন বছরে কসবা-আখাউড়ায় প্রায় ২৮০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। আর আগের সময়গুলোতে এখানে দুর্নীতি হয়েছে। আমার মনে হয়, যে রকম তদারক করা উচিত ছিল সেভাবে করা হয়নি। কিছুটা দায়িত্বহীনতাও ছিল।’ এলাকার মানুষের একটা বড় চাহিদা গ্যাস। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের বিষয়ে মানুষের চাহিদা আছে। কিন্তু আমি যেটা পারব না তা বলব না। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আজকের সত্য আমাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। আর আজকের মিথ্যা আমার আগামীকালের রাস্তা বন্ধ করে দেবে। আমার সঙ্গে জনগণের সুসম্পর্কটা কেন জানেন? আমি মানুষকে কোনো মিথ্যা আশ্বাস দিই না। মিথ্যা কথা বলি না। যা পারব না তা বলি না। আমার বড় পুঁজি হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য আমাকে যা করতে হয় তা আমি করব। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে এবং আমার মুখের কথাটা মানুষ মানে। কারণ আমি পরিষ্কার বলে দিই, আমি এটা পারব, এটা পারব না। হ্যাঁ, গ্যাস এখানকার মানুষের একটা চাহিদা। জনগণের যে এই চাওয়ার পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। এই কসবা কিন্তু একটা গ্যাস উৎপাদন উপজেলা। আমাদের শালদা নদী থেকে গ্যাস উৎপাদন হয়। এখান থেকে জাতীয় গ্রিডে আমরা ২০ মিলিয়ন কিউবিক গ্যাস প্রতিদিন দিচ্ছি। স্বাভাবিকভাবেই আমরা বলতে পারি, আমাদের উপজেলায় গ্যাস দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু কথাটা হচ্ছে, আমাদের এই প্রয়োজনীয়তা আর জাতীয় প্রয়োজনীয়তার মধ্যে একটা সমন্বয় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গ্যাসের স্বল্পতার কারণে একটা নীতি গ্রহণ করেছে যে, গৃহস্থালির কাজে আর গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যবসার ক্ষেত্রে, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে, শিল্পের প্রয়োজনে গ্যাস দেওয়া হবে। আমি জনগণকে পরিষ্কার বলেছি, দেখেন, আমি কিন্তু আপনাদের গৃহস্থালির কাজে গ্যাস দিতে পারব না। শিল্পায়নের কাজে, শিল্পায়নের প্রয়োজনে, শিল্পের কারখানার জন্য, শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে, জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের প্রয়োজন হলে দেওয়া হবে। আমি কসবা-আখাউড়ায় শিল্পায়নের জন্য কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এখানে একটা বিসিক শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন করলে বিসিক শিল্পনগরীতে গ্যাস সংযোগ দেব। জনগণের কাজ করার পাশাপাশি আমি আমার এলাকায় দলকে সংগঠিত করছি। আমরা যে প্রতিনিয়ত জঙ্গিবাদের হুমকির মধ্যে থাকি, তা নির্মূল করার জন্য আমাদের দল কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না, সেহেতু তারা যে কোনো রকম নাশকতামূলক কাজ করতে পিছপা হবে না। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা এবং আমাদের দল কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ২০১৯ সালের নির্বাচন সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’     নির্বাচনী এলাকা নিয়ে কী কী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আখাউড়া একটি ঐতিহাসিক শহর। ব্রিটিশ আমল থেকেই এটি একটি বড় রেলওয়ে জংশন। আজকে আখাউড়া একটি বড় স্থলবন্দরও। এ কারণে আখাউড়ার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। আখাউড়া-আগরতলা একটা রেল সংযোগ হচ্ছে। সে কারণে আখাউড়ার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে আখাউড়ায় বড় ধরনের শিল্পকারখানা করা যায়। এখন সেখানে কী ধরনের শিল্পকারখানা করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি তা হচ্ছে, অবকাঠামো উন্নয়ন করে আখাউড়াকে একটা ট্যুরিস্ট টাউন করার ইচ্ছা আছে। আখাউড়া স্টেশনটাকে আরও আধুনিক করার পরিকল্পনা নিয়েছি। কসবা-আখাউড়ার প্রধান সড়কগুলোর উন্নয়ন হয়ে গেছে। এখন মোটা দাগে তেমন কাজ নেই। তবে গ্রামগঞ্জে যেসব রাস্তা এখনো পাকা হয়নি, সেগুলো দ্রুত পাকা করা, এ দুই উপজেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন করা, তিতাস নদীকে খনন করে এর নাব্য ফিরিয়ে আনা, একটা পরিবেশবান্ধব নদীতে রূপান্তর করা, এ অঞ্চলের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে তিতাসকে বাঁচিয়ে রেখে এই নদীপথে পুনরায় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করা এখন প্রধান কাজ।’ তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য যে বরাদ্দ আসবে সেগুলো শুধু ঢেলে দিলেই হবে না। প্রয়োজন পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা। পরিকল্পিতভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না তার তদারক করা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমি মনে করি আমার নির্বাচনী এলাকায় যারা বেকার, যদি তাদের কর্মসংস্থান হয় তাহলে এলাকায় সব রকম অপরাধ কর্মকাণ্ড কমে যাবে। তরুণ-যুবকরা আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচে সে চেষ্টা করা। তাই কসবা-আখাউড়ার তরুণ-যুবকদের কর্মসংস্থান করে দেওয়া আরেকটি প্রধান কাজ। মাদক একটা বড় সমস্যা। বিশেষ করে আখাউড়া এলাকায়। এটা যাতে পুরোপুরি বন্ধ করা যায় সে চেষ্টা করছি।’ আনিসুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ ৬৬ বছর পর এবারই শেখ হাসিনার সরকারের আমলে কসবা-আখাউড়ার মানুষ মন্ত্রী পেয়েছে। আমাকে মন্ত্রী করে এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ দেওয়ায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ আমি মন্ত্রী, সেটিকে কাজে লাগিয়েছি এলাকার উন্নয়নে।’

সর্বশেষ খবর