বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
কেমন বাজেট চাই

কাগুজে সংস্কৃতি বদলাতে হবে

মানিক মুনতাসির

কাগুজে সংস্কৃতি বদলাতে হবে

ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ানো হয়। বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অর্থবছরের শেষে এসে আবার তা সংশোধন করে কমানো হয়। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সংশোধিত বাজেটও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে দিনে দিনে এসব বাজেট কাগুজে বাজেটে পরিণত হচ্ছে। এমন কাগুজে বাজেটের সংস্কৃতি বদলাতে না পারলে বাজেটের সুফল পাওয়া যাবে না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০১২ সালের বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছিল ৯৩ শতাংশ। আর বাজেট বাস্তবায়নের এই হার কমতে কমতে ২০১৬ সালে নেমে এসেছে ৭৮ শতাংশে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আগামী অর্থবছরের বাজেট ভাবনা নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী বাজেট প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, উচ্চাভিলাষ এবং বাস্তবায়ন সক্ষমতার ভারসাম্য রেখে বাজেট দিতে হবে। শুধু টাকার অঙ্কে বিশাল বাজেট দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে সেটা হবে কাগুজে বাজেট। এমন বাজেট দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। প্রতি বছরই অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। কিন্তু এসব খাতের উন্নতি কতটা হচ্ছে সেটাও দেখার বিষয়। ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে না পারা কিংবা অর্থায়ন করতে না পারার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন কমে যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার তার জোগান বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছরও হয়তো আশানুরূপ রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ফলে বছর শেষে আবারও বাজেট কাটছাঁট করা হবে। ফলে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক চিত্র চোখে পড়ে না। এজন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। তারও আগে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করতে হবে বলে মনে করেন প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ।

সাবেক উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতাও সে হারে বাড়েনি, যে হারে প্রতি বছর রাজস্ব বাজেট বাড়ানো হয়। এ ছাড়া গত পাঁচ বছর পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয়সংখ্যক নতুন করদাতাও চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে শুধু করের হার বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরিকল্পনা করা যথোপযুক্ত হবে না। কেননা কর বাড়ালেই করদাতা বা সাধারণ মানুষের ওপর এর চাপ পড়ে। এজন্য করজাল বাড়াতে হবে।  বেশিসংখ্যক মানুষকে করের আওতায় আনতে হবে। ভ্যাট আইনের ব্যাপারে ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট একটু বেশিই। কেননা এশিয়ার কোনো দেশের হয়তো এত বেশি হারে ভ্যাট কার্যকর নেই। যেহেতু বাজেটের অর্থও জোগাড় করতে হবে।

আবার ভ্যাটও আদায় করতে হবে। ফলে জনগণের ভোগান্তি কম হবে বা হবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বর্তমানে ভ্যাট ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। পাঁচ বছর পর আবারও বাজেট ঘাটতি মোট জিডিপির ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে— অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে মির্জ্জা আজিজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এটা তেমন কোনো উদ্বেগের বিষয় না। কেননা অনেক উন্নত দেশও ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করে।

সর্বশেষ খবর