সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
চলমান রাজনীতি

সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি : রিজভী

মাহমুদ আজহার

সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি : রিজভী

চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আকস্মিকভাবে পুলিশি তল্লাশিকে সরকারের ‘অশুভ’ নীলনকশারই অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘এ তল্লাশি সরকারের একই ঘৃণ্য কৌশল। সারা দেশের মানুষ সরকারকেই ধিক্কার জানাচ্ছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকার আমাদের এখনই রাজপথে নামাতে চায়। কিন্তু সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। আমরা চলব দলীয় স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। ভোটারবিহীন সরকার অনাচারে বেসামাল হয়ে পড়ায় মানুষের চোখকে ভিন্ন দিকে সরানোর জন্যই  চেয়ারপারসন কার্যালয়ে এই ঘৃণ্য আক্রমণ।’ সম্প্রতি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেন রিজভী আহমেদ। গত ২০ মে গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির সময় রিজভী আহমেদই প্রথম ঘটনাস্থলে যান। ওই তল্লাশির বাস্তব সাক্ষী ছিলেন তিনি। তার একান্ত আলাপচারিতার বড় অংশই ছিল গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি ইস্যু। ওই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। এ প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘সরকার চারদিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়ছে। নিজেদের নানামুখী ব্যর্থতা, দুর্নীতি, লুটপাট, দখল, অনাচার, খুন, ধর্ষণ— সবকিছুতেই সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা জড়িত। সরকার নিজেদের অপকর্ম নানাভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা তারা পারছে না। গণমাধ্যমের সুবাদে তাদের অপকর্ম জনগণ জানতে পারছে। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কি উদ্দেশ্যে হানা দিল পুলিশ। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় অশুভ কোনো উদ্দেশ্য ছিল। নইলে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের আগে জানাত, কিংবা ম্যাডামের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে জানাতে পারত। কাউকে জানানো হয়নি। যখন কার্যালয়ে কেউ নেই, এত সকালে পিয়ন কর্মচারীকে ধমক দিয়ে তালা ভেঙে এ তল্লাশি চালায়। তবে তারা তাদের অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’ অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের নানা ধরনের কৌশলের অংশ হিসেবে গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালায়। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চাপা ক্ষোভ, হতাশা, অবরুদ্ধ গণতন্ত্রে কথা না বলতে পারার যে বেদনা, সবকিছু মিলিয়ে যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ ছিল, এমন একটি পরিস্থিতিতে আমাদের চেয়ারপারসনের ২০৩০-ভিশনে জনগণের মধ্যে চাঙ্গাভাবে আসে। এসব দেখেই সরকার বুঝতে পেরেছে যে, তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই।  সেটা দেখেই এই তল্লাশি। বিএনপি আগামী নির্বাচনে কতটুকু প্রস্তুত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনার দল। যারা দেশ পরিচালনা করে থাকেন, তারা সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকেন। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো হাসিনা মার্কা নির্বাচন হলে তো আর গ্রহণযোগ্য হবে না। মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আমরা নির্বাচনে যাব। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যেই বিএনপি শিগগিরই সহায়ক সরকারের একটি রূপরেখা দেবে। সরকার দাবি না মানলে বিএনপি কি ফের আন্দোলনে যাবে— এমন প্রশ্ন রাখা হয় রিজভী আহমেদের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গণতন্ত্রের আড়ালে এক ধরনের ফ্যাসিজম চলছে। আর ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই কখনোই স্বল্পস্থায়ী নয়, দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেই লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। সরকারের যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তাহলে তারা একটি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবে। না হলে তারা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কিংবা মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য  আন্দোলনের বিকল্পই বা কি আছে।’ তিনি বলেন, বিরোধী দল বা জনগণের কথা বা দাবি যদি সরকার আমলে না নেন তাহলে বিএনপিরই বা কি বিকল্প আছে। তবে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এখন আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য সমানভাবে প্রস্তুত।’ বিএনপি-জামায়াতের টানাপোড়েন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘টানাপোড়েনের খবর সঠিক নয়। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি নির্বাচন আর আন্দোলনের ঐক্য। বিএনপি একটি আলাদা রাজনৈতিক দল, জামায়াতও আলাদা দল। তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সবাই জানে। তারা জোটে আছে। জোটের রাজনীতি তো এখনো আছে।’ দলের চেয়ারপারসনের ভিশন-২০৩০ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়ন হবে। ভিশনে চেয়ারপারসন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নির্বাচন, আইন, সামাজিকসহ বেশকিছু সংস্কারের কথা বলেছেন। গণমাধ্যমের মাধ্যমে এই ভিশন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে। এরমধ্যে জেলায় জেলায় ভিশনের বই নেতা-কর্মীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ নিয়ে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হচ্ছে। এই ভিশন ঘোষণার পর সারা দেশের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে। ভিশনে প্রতিহিংসার রাজনীতি বর্জনের কথা বলা হয়েছে। এটা কি সম্ভব— এমন প্রশ্নে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির পক্ষে এটা সম্ভব। অতীতেও তাই হয়েছে। গণতন্ত্রে বিতর্ক থাকবে, প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু প্রতিহিংসা থাকবে না। জিয়াউর রহমান যখন বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেন, তখন কি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছিলেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছিলেন? বিএনপি দুবার ক্ষমতায় এসেছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছে? রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে? নেতাদের কারাগারে পাঠিয়েছে? কারও ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে?’ দফতরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ফেলানীর কাঁটাতারে লাশ ঝুলে থাকা কিংবা এক বালতি তিস্তার পানিও না আনতে পারা নিয়ে সরকারের কোনো প্রতিবাদ নেই। তারা শুধু দেশের বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টায় মগ্ন। এরপরও আমাদের চেয়ারপারসন ভিশন-২০৩০ এ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না।’ তিনি বলেন, প্রশ্নাতীত একক কর্তৃত্বে অধিষ্ঠিত শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া পুলিশ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হানা দেয়নি। এ ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আবারও প্রধানমন্ত্রী পেছনের দরজা দিয়ে আরেকটি ভোটারশূন্য নির্বাচন করবেন কি না। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে সব বাজিকরই নৌকায় উঠবে। পরে সেই নৌকার কি দশা হবে তা জাতি দেখতে পাবে।

সর্বশেষ খবর