সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

যে চার কারণে বাড়লো মোটা চালের দাম

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যে চার কারণে বাড়লো মোটা চালের দাম

বাজারে মোটা চালের দাম বাড়ার সম্ভাব্য ৪টি কারণ চিহ্নিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, মোটা চালের বর্তমান মূল্য বৃদ্ধি সাময়িক ও মৌসুমি। প্রতি বছর এ সময় মোটা চালের মূল্য বৃদ্ধি ঘটে। কিছুদিন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই ঘাটতি কাটাতে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করার বিষয়েও মতামত দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সংক্রান্ত মাসিক সভায় মোটা চালের দাম বাড়ার কারণগুলো তুলে ধরা হয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে বাজারে মোটা আকারের স্বর্ণা ও গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে, যা ছয় মাস আগেও ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। অর্থাত্ গত ছয় মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৮ থেকে ১০ টাকা।

মোটা চালের দাম নিয়ে সভায় যে কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে : (১) মোটা চালকে মেশিনে ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে     চিকন চালে রূপান্তরের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় মোটা চালের খুচরা বাজারে সরবরাহ কমে গেছে; (২) চলতি অর্থবছরে ২০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ থাকায় ধান-চাল সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে এরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে যে, দেশে চালের সংকট তৈরি হলে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের পরিস্থিতি অনুমান করে ব্যবসায়ীরা মজুদ বাড়িয়ে দিয়ে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন; (৩) এ বছর অস্বাভাবিক আগাম বৃষ্টি হওয়ার কারণে জমিতে সূর্যকিরণ কম হয়েছে। ফলে বোরো ধানের সালোকসংশ্লেষণ কম হওয়ায় ফলন কম হতে পারে এমন অনুমানে ব্যবসায়ীরা সাময়িক মজুদ বাড়িয়ে দিয়েছেন; এবং (৪) শিলাবৃষ্টির কারণে উত্পাদন ব্যাহত হলে বাজারে চালের দাম পাওয়া যেতে পারে এই অনুমানেও মজুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সভায় মোটা চালের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের মজুদ বৃদ্ধির ওপরের কারণগুলো তুলে ধরা হলেও এরপর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে হাওরে অকাল বন্যায় ধানের উত্পাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে মোটা চালের দাম বাড়ার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) শনিবার তাদের গবেষণায় জানিয়েছে, হাওরাঞ্চলে (হঠাত্ বন্যা) বিপর্যয়ের কারণে এ বছর প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন বোরোর আবাদ কম হবে, যা মোট উত্পাদনের প্রায় ৮ শতাংশ। গত ৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাসসংক্রান্ত ওই মাসিক সভায় সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। যা বলার মন্ত্রী মহোদয় বলবেন।’ তবে গত ৯ এপ্রিল ওই সভার যে কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়, সেখানে পণ্যের মজুদদারির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর স্বাক্ষরিত সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরির উদ্দেশে অবৈধ মজুদদারি দেখা গেলে জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া হঠাত্ বন্যা হলে বা আবহাওয়াজনিত অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়েও মতামত দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর