বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশি তিন বেসরকারি বিমান

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আরামদায়ক এবং নিরাপদ যাত্রীসেবার প্রত্যয় নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থা। সরকারি বিমানের হাজারো সমস্যার কারণে যখন যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল তখন দেশীয় পরিবহনে যাত্রী ফিরিয়ে আনতে যাত্রা করে বেসরকারি এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশীয় সাতটি রুটসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে নিজেদের প্রশস্তির জায়গা বাড়াচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। আর তিনটি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটের প্রতিযোগিতায় কম মূল্যে ভালো সেবা পাচ্ছেন যাত্রীরা। সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, নভো এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর, কক্সবাজার, বরিশাল— এই সাতটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণ গন্তব্য ছাড়াও আন্তর্জাতিক রুটে তারা নেপালের কাঠমান্ডু, ভারতের কলকাতা, ওমানের মাসকাট, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর এবং ব্যাংকক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। শুধু ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসই দেশের অভ্যন্তরীণ সাতটি রুট এবং আন্তর্জাতিক এতগুলো রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। আগামী আগস্ট থেকে দোহা ও দাম্মাম রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এয়ারলাইনসটি। ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের বহরে বর্তমানে যুক্ত আছে ছয়টি বিমান। আগামী জুলাইয়ে যুক্ত হবে আরও দুটি।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা বিমানের যাত্রীসেবার ব্যাপারে সবচেয়ে খেয়াল রাখি সঠিক সময়ে ফ্লাইট পরিচালনার দিকে। আর এ ক্ষেত্রে এই কয়েক বছরে আমরা যাত্রীদের কাছে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছি। আমাদের পরবর্তী গুরুত্বের বিষয় হলো যাত্রীদের বিমানে থাকাকালে সেবার ব্যাপারে সচেতন থাকা। আমরা বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ সব রুটে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করছি। এক ঘণ্টা পরপর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট ছেড়ে যাচ্ছে। এখন টার্গেট খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাড়ানো। আমরা এই জায়গা নিতে না পারলে বিদেশি কোম্পানি ব্যবসা চালিয়ে যাবে।’ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে হাজারো সমস্যা এবং মুখ থুবড়ে পড়া বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বেসরকারি বিমানের এই তিনটি ফ্লাইট। বিমান পরিবহনে দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে নভো এয়ার। দেশের ভিতরে পাঁচটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে নভো এয়ার। বরিশাল ও রাজশাহী রুটে বর্তমানে ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে নভো এয়ার। বর্তমানে নভো এয়ারের এই একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলমান রয়েছে। এর আগে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে নভো এয়ারের ফ্লাইট যাতায়াত করত। কিন্তু মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফ্লাইট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় নভো এয়ার কর্তৃপক্ষ। ছয়টি বিমানের মাধ্যমে নভো এয়ার তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এ ব্যাপারে নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা একে ব্যবসা হিসেবে না দেখে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি। আমাদের প্রথম টার্গেট দেশের অভ্যন্তরের সব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা। এরপর আস্তে আস্তে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াব আমরা।’ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ সবচেয়ে পুরনো। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার ও যশোর রুটে চলাচল করছে। তারা প্রায় ছয় বছর ধরে অ্যাভিয়েশন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এয়ারলাইনসটি অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি ওমানের মাসকাট, ভারতের কলকাতা, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। শুধু যাত্রীসেবা নয়, এই সংস্থাগুলোয় কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে কয়েক হাজার লোকের। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে খুব একটা সুবিধা পায় না এই প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ভালো সেবা দিলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনায় অনেক সময়ই যাত্রীদের পড়তে হয় বিপত্তিতে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৫ সালে বেসরকারি এয়ারলাইনস অ্যারো বেঙ্গলকে আকাশপথে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে প্রথম যাত্রী পরিবহন শুরু করে তারা। কিন্তু ’৯৮ সালেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অ্যারো বেঙ্গলের পরপরই চালু হয়েছিল এয়ার পারাবত, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইনস, রয়েল বেঙ্গল ও বেস্ট এয়ার। যেগুলোর কোনোটিই এখন আর সচল নেই। এ ছয়টি এয়ারলাইনসই অর্থ সংকট দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কয়েক বছর একচেটিয়া ব্যবসা করলেও অর্থ ও এয়ারক্রাফট সংকটে গত বছর থেকে বন্ধ রয়েছে তাদের কার্যক্রম। অভ্যন্তরীণ রুটে এখন ইউএস বাংলা, নভো এয়ার ও রিজেন্ট এয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

সর্বশেষ খবর