শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

চিকিৎসা হাসপাতালে টেস্ট ক্লিনিকে

চক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দালালদের কারসাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চোখে বাঁশের কঞ্চির খোঁচা লাগায় মানিকগঞ্জ থেকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন আমিনুল হক। ডাক্তার তাকে কিছু টেস্ট করিয়ে আনতে বলেন। ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে তার সঙ্গে আসা মেয়েজামাই এবং আরেকজন লোকের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন টেস্ট কোথায় করাবেন এ নিয়ে। সঙ্গে থাকা লোকটি তাদের পরামর্শ দেন মেট্রোপ্যাথ নামে একটি প্যাথলজিতে টেস্ট করানোর জন্য। আর হাসপাতালের মেশিন নষ্ট, ভুল রিপোর্ট আসে এবং খরচ বেশি এসব যুক্তি মুহূর্তে দাঁড় করিয়ে ফেলেন ক্লিনিকে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে।

সরেজমিন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এরকম অনেক রোগী ডাক্তার দেখানোর জন্য বহির্বিভাগে বসে থাকলে তাদের কাছে প্রচারপত্র বিলি করে বেড়ান এক শ্রেণির দালাল। মাঝে মাঝে হাসপাতালের কর্মচারীদের দেখলে রোগীর ভান ধরে বসে থাকতে দেখা যায় তাদের। এ সময় একজনের কাছে প্রাইভেট ক্লিনিকে খরচ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সরকারি হাসপাতালের চেয়ে কম। কম কত জানতে চাইলে মমিন আলী নামের ওই ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, এখানে সব রেট বলা সম্ভব নয়, প্যাথলজিতে গেলে ৫০ শতাংশ ছাড়ে টেস্ট করিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে প্রতিটি রোগীকে ধরে প্যাথলজিতে টেস্ট করানোর জন্য জোড়াজুড়ি করতে থাকেন দালালরা। অনেক সময় হাসপাতালের কর্মচারীরা দেখলেও বলে না কিছুই। এ ছাড়া কম দামে চোখের লেন্স বিক্রির বিষয়ে রোগীদের কাছে প্রচার করতে থাকেন এই দালালরা। শফিক আলী নামে আরেকজনকে দেখা যায় ‘ল্যাব কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের প্রচারপত্র চুপ করে রোগীদের হাতে গুঁজে দিতে। এরপর ডাক্তার দেখানো শেষে দোতলায় ফাঁকা জায়গায় হাসপাতালের চেয়ে ওই প্যাথলজিতে কম খরচ বলে বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ল্যাব কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের ওই প্যাথলজির পরীক্ষা খরচের তালিকায় গিয়ে দেখা যায়, এক্স-রে খরচ ৩৫০ টাকা, ইসিজিতে ২৫০ টাকা, এইচবিএসএজিতে ৬০০ টাকা খরচ লাগে। অথচ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগীদের এক্স-রে করতে খরচ হয় ২০০ টাকা, ইসিজিতে ৮০ টাকা এবং এইচবিএসএজিতে ১৫০ টাকা। প্রতিটি মেশিনই সচল আছে এবং প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে টেস্ট করাচ্ছে। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে কিছু মানুষের খরচ এবং ভোগান্তি দুটোই বাড়ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রংপুরের শোয়েব আলী বলেন, এখানে আসার পর থেকেই বিভিন্ন ছাড়ের কথা বলে আমাদের প্রাইভেট ক্লিনিকের কথা বলতে এসেছিল দালালরা। কিন্তু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখেছি এখানে সব টেস্টই অনেক কম খরচে হয়। এরপর আমাদের বলতে এলে বলছি পুলিশে ধরিয়ে দেব। এরপর আর আসেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, এর আগে বেশকবার দালাল ধরে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোগীর সঙ্গে মিশে এরা ঢুকে পড়ে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার রোগীর ভিড়ে দু-একটা দালাল খুঁজে বের করা কঠিন। আবার অনেক সময় হাসপাতাল গেটের বাইরে থেকেও এরা রোগী বাগিয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দালাল প্রতিরোধ করতে আমরা একটা শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করেছি। এ ছাড়া হাসপাতালের কর্মচারীদেরও রোগীদের সেবার বিষয়ে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। সতর্কতার কারণে হাসপাতালে দালালের আনাগোনা আর নেই।

সর্বশেষ খবর