বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডাক্তার ব্যস্ত অন্য কাজে রোগীরা গোনেন প্রহর

কিডনি ইনস্টিটিউটে একদিন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দুপুর ১টা। রবিবার শেরবাংলানগরের জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসকের অপেক্ষায় বসে আছেন প্রায় ৩০ জন রোগী। কিন্তু অধিকাংশ কক্ষেই নেই চিকিৎসক। দু-এক জন থাকলেও তারা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিকে নিয়ে ব্যস্ত। ফলে দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে ডাক্তারের অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন রোগীরা।

সরেজমিন অধিকাংশ চিকিৎসকের কক্ষই তালাবদ্ধ দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু তাদের শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়, চিকিৎসক পাওয়া যায় না। এখানে অধিকাংশ মানুষই আসেন ডায়ালিসিসের জন্য। কারণ এ হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে এই সেবা পাওয়া যায়। কিন্তু হাসপাতালের ৪২টি ডায়ালিসিস যন্ত্রের অধিকাংশই নষ্ট। এজন্য ভর্তি হতে পারলেও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। হাসপাতালের তৃতীয় তলার মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী আফরোজা বেগম বলেন, ‘সিট পেতে অনেক দিন দেরি করতে হয়েছে। ভর্তি হওয়ার পরও বেশ কয়েক দিন এভাবেই হাসপাতালে থাকি। এরপর আমার ডায়ালিসিস শুরু হয়।’ এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক মো. নূরুল হুদা বলেন, ‘ডাক্তার সবাই আছেন। অনেক সময় ওয়ার্ডে বা প্যাথলজিতে যেতে হয়। এজন্য হয়তো নির্দিষ্ট সময়ে ছিলেন না। কিন্তু ডিউটি বাদ দিয়ে বাইরে যাওয়ার সাহস কারও নেই।’ ডায়ালিসিস যন্ত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিপিপির (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) ভিত্তিতে ৭০টি ডায়ালিসিস যন্ত্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৫টি যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। পরের পর্যায়ে বাকিগুলো স্থাপন করা হবে। বেশকিছু যন্ত্রপাতি চলে এসেছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে সব যন্ত্র স্থাপন করবে। অথচ দুই বছর ধরে ‘দিচ্ছি দেব’ করে এত দিনে মাত্র ১৫টি স্থাপন করেছে। হাসপাতালে থাকা ডায়ালিসিস যন্ত্রগুলো ২০০৩-০৪ সালের দিকে কেনা। পিপিপির আওতায় নতুন যন্ত্র বসবে বলে এসব যন্ত্রের মেরামত বা প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাই প্রায় সময়ই নষ্ট থাকে কোনো না কোনো যন্ত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যা। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট বা অকেজো হলে তার চিকিৎসা কিডনি প্রতিস্থাপন অথবা ডায়ালিসিস। শরীরের বর্জ্য প্রস্রাবের সঙ্গে বের করতে সহায়তা করে কিডনি। কিডনি নষ্ট হলে ডায়ালিসিস যন্ত্রের সাহায্যে সেই বর্জ্য বের করা হয়, অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে পুনরায় তাকে সুস্থ করে তোলা হয়। প্রতিস্থাপনকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ এই হাসপাতালে হাতে গোনা দু-একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত ছয় মাসে এই হাসপাতালে একজন রোগীরও কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়নি। ফলে অধিকাংশ রোগীই চিকিৎসা নিতে অন্য হাসপাতালের শরণাপন্ন হন। এজন্য অন্য হাসপাতালগুলোয় চাপ বাড়ে। আর এই সুযোগে কিডনি হাসপাতালের পাশেই গড়ে ওঠা একটি ক্লিনিক নিয়ে যাচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের পরিচালক মো. নূরুল হুদা কিডনি নিয়ে ব্যবসার বিষয়ে বলেন, ‘কিডনি দেওয়া নিয়ে এর আগে অনেক ব্যবসা এবং দুর্নীতি হয়েছে। এজন্য আমরা কিডনি প্রতিস্থাপনের আগে পুলিশের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করি। আমরা মৃত মানুষের কিডনি বা ক্যাডাভারিক সংগ্রহ করতে পারলে অনেক রোগীর ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারব। এজন্য নিজেদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছি।’

সর্বশেষ খবর