বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঈদ নিরাপত্তা দেশজুড়ে

মির্জা মেহেদী তমাল

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও রোজার শেষ কয়েক দিনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা-বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ নিয়েছে নতুন কৌশল। নজরদারি বাড়াতে ইতিমধ্যে মাঠে নামানো হয়েছে গোয়েন্দাদের। গত বছর রমজানের শেষ মুহূর্তে হলি আর্টিজান এবং ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে জঙ্গিদের সশস্ত্র হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গিদের ডেরা সম্পর্কে গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীতে পুলিশ ও র‌্যাবের চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী গ্রেফতারে তাদের অভিযান চলছে। ছিনতাইকারী, পকেটমার ও মলম পার্টির সদস্যদের পাকড়াও করতে এবার পুলিশ ও র‌্যাব বিশেষ কৌশল নিয়েছে। অপরাধী ধরতে থাকছে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল। এ ছাড়া নজরদারি

রাখা হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কারসাজির অবৈধ সিন্ডিকেটের ওপর। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাটে টহল বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইকারী, পকেটমার ও মলম পার্টির সদস্যদের পাকড়াও করতে এবার পুলিশ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করবে। অপরাধী ধরতে থাকছে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল। গত বছর হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের সামনে জঙ্গি হামলার পর এবার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক ইতিপূর্বে  বলেছেন, এবারের ঈদ সামনে রেখে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার হুমকি বা আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশপ্রধান বলেন, ‘ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো আছে। ঈদ উপলক্ষে পরিকল্পিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষ যাতে শান্তিতে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে সে জন্যই এ ব্যবস্থা।’

এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। নানা কৌশল নির্ধারণ করা হয় সেসব সভায়। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সমন্বয় সভারও আয়োজন করা হয়, যাতে পুলিশ কমিশনারসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক সমন্বয় সভায় বলেছেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি নাগরিককে সমানভাবে নিরাপত্তা দিতে পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ। সে লক্ষ্যে জীবন বাজি রেখে নিরলসভাবে কাজ করছেন সব পুলিশ সদস্য। কমিশনার বলেন, ‘কোনো টার্মিনালে আমরা এখনো চাঁদাবাজি, টিকিট কালোবাজারির সংবাদ পাইনি। যদি কেউ চাঁদাবাজি ও টিকিট কালোবাজারি করে, তাকে এতটুকু ছাড় দেওয়া হবে না। গত দুই মাসে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ১০০ জনের মতো সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা ও থানা পুলিশ অজ্ঞান ও মলম পার্টি ধরতে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, যদি কেউ বড় অঙ্কের টাকা বহন করতে চান, তাহলে পুলিশের মানি এসকর্ট নিয়ে ঢাকা শহরের যে কোনো জায়গায় টাকা বহন করে নিয়ে যেতে পারেন। মানি এসকর্ট ছাড়া বড় অঙ্কের টাকা বহন না করাই ভালো। ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ রেখে সবার প্রতি একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার। সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান মাসকে ইতিপূর্বে ১০ দিন করে তিন ভাগে ভাগ করে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় পুলিশ ও র‌্যাব। প্রথম দুটি ভাগ ভালোভাবেই কাটে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। রাজধানীর চিহ্নিত অপরাধপ্রবণ এলাকা, শপিং মল এবং বাস টার্মিনাল এলাকায় স্থাপন করা হয় ৩০টি ক্যাম্প। সারা দেশে রমজান উপলক্ষে গঠন করা র‌্যাবের ২০টি বিশেষ দলের ১০টিই রয়েছে রাজধানীতে। র‌্যাব রমজানের শেষ সময় ও ঈদের আগমুহূর্তে টিকিট কালোবাজারি, টার্মিনাল, ঘাটে তৎপরতা বাড়িয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারেন সে জন্য র‌্যাব মাঠে রয়েছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই রোধে র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর রমজান এলেই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বসে। বিভিন্ন বিপণিবিতানে ছিনতাইকারীরা সক্রিয় থাকে। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতারা। রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, মিরপুর, মৌচাক, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, রায়েরবাজার, মহাখালী, কমলাপুর ও গাবতলী এলাকায় এ ধরনের অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়। কিন্তু এবার পুলিশ অনেকটা আগে থেকেই বাড়তি সতর্কাবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, রাজধানীর সব পেশাজীবীর নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপদ করা হবে রাজধানীর ভোরের রাস্তা। প্যাট্রোল টহল, চেকপোস্টের পুলিশের পাশাপাশি থাকবে সাদা পোশাকের বিশেষ গোয়েন্দা পুলিশ। ডিএমপি সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীকে বিশেষ কয়েকটি অপরাধ জোনে ভাগ করে একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীকে ১৩টি অপরাধ জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি জোনে একজন ডিসির নিয়ন্ত্রণে পুলিশসহ ২৬ সদস্যের একটি টিম দায়িত্ব পালন করবে। সূত্রমতে, রমনা, লালবাগ, তেজগাঁও, মিরপুর, ওয়ারী, মতিঝিল, গুলশান ও উত্তরা বিভাগ থেকে গঠিত অপরাধ বিভাগের আটটি সিভিল টিম বিভিন্ন কৌশলে অপরাধী ধরতে ওতপেতে থাকবে। বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্স ভবনের সামনে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা। মার্কেটের নিজস্ব সিকিউরিটি ও মার্কেট কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সমন্বয়ে অতিরিক্ত প্রহরার ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য বিভিন্ন এলাকার মার্কেট সমিতির নেতাদের সঙ্গে পুলিশের চলছে মতবিনিময় সভা। ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম মাঠে থাকবে। আটটি ক্যাম্প ডিভিশনের সদস্যরা সাদা পোশাকে রাজধানীর ছিনতাই ও ডাকাতিপ্রবণ এলাকায় নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া কারওরান বাজার, শ্যামবাজারসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে ক্রেতা সেজে রয়েছেন গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, ছিনতাই, ডাকাতি ও পকেটমার ধরতে অর্ধশত স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়েছেন। ফার্মগেট, মগবাজার, মৌচাক, মহাখালী, গাবতলী, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, কাকরাইল, পল্টন, গুলশান, নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বিলাসবহুল শপিং মল ও মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যাংক ভবন এলাকায় তারা দায়িত্ব পালন করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর