বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাথরভাঙা শ্রমিকদের আতঙ্ক ঘাতকব্যাধি সিলিকোসিস

বুড়িমারীতে ৮ বছরে ৬৭ জনের মৃত্যু

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ফুসফুসের ব্যাধি সিলিকোসিসে ভুগে মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। প্রধানত পাথরভাঙা শ্রমিকরাই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। গত সাড়ে ৮ বছরে সিলিকোসিসে ৬৭ জন শ্রমিক মারা গেছে। সর্বশেষ ৪ জুন মারা গেছে শ্রমিক রাজু মিয়া (২৮)।

সূত্র জানায়, বর্তমানে শতাধিক পাথরভাঙা শ্রমিক সিলিকোসিসে ভুগছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বুড়িমারী স্থলবন্দর জুড়ে পাথরভাঙা মেশিনের শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে ব্যবহৃত হচ্ছে পাঁচ শতাধিক ক্রাশিং মেশিন। পাথরভাঙা হচ্ছে তার গুঁড়া নাক-মুখ দিয়ে শ্রমিকদের ফুসফুসে ঢুকছে। এতে বাসা বাঁধছে সিলিকোসিস। মুখোশ পরে কাজ করার নিয়ম। কিন্তু শ্রমিকরা এ ব্যাপারে উদাসীন। এতে করে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০১২ সালের আগষ্টে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রথম ধরা পড়ে সিলিকোসিস। ওই বছর এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এমন তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটির সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়ার নানা দিক তুলে ধরেন। সে সময়ে আক্রান্তের স্যাংখা ছিল শতাধিক। এর মধ্যে আক্রান্তদের অনেকেই মারা যায়। গত বছর আরও ৩০ জন সিলিকোসিস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের একজন ছিলেন রাজু মিয়া (২৮)। তিনি ৪ জুন ঢাকায় জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে মারা গেছেন গত মার্চে হামিদুল ইসলাম (৩৫) নামের এক শ্রমিক। স্থানীয় শ্রমিক সর্দার ও বুড়িমারী স্থলবন্দর পাথর ভাঙা শ্রমিক সুরক্ষা কমিটির সভাপতি মমিনুর রহমান বলেন, রাজু দীর্ঘদিন থেকে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপরেও তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি চিকিৎসকরা। মমিনুর রহমান নিজেও এই রোগে ভুগছেন। তিনি জানান, তার অধীনে রাজুসহ ২০ শ্রমিক বুড়িমারী স্থল বন্দরে পাথর ক্রাশিং কারখানায় ৪/৫ বছর ধরে কাজ করছিল। বুড়িমারীর অপর শ্রমিক সর্দার মতিউল ইসলাম জানান, তিনিও সিলিকোসিস রোগী। তার অধীনে থাকা ১৬ শ্রমিক আক্রান্ত। গবেষকদের মতে, বিশ্বে এ রোগটি অনেক পুরনো হলেও বাংলাদেশে নতুন। এর আগে ২০০৩ সালে ঢাকায় এ রোগের সন্ধান মিললেও তা যাচাই বাছাইয়ের তেমন কোনো যন্ত্রপাতি না থাকায় সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘শ্রমিকদের সিলিকোসিস সম্পর্কে নানাভাবে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। ভাঙার আগে পাথর ভিজিয়ে নেওয়া এবং মুখোশ পরা অপরিহার্য। কিন্তু শ্রমিকরা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সিলিকোসিস রোগে একবার কেউ আক্রান্ত হলে নিরাময় করা প্রায় অসম্ভব। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর কুতুবুল আলম বলেন, সিলোকোসিসে শ্রমিকদের অকাল মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বুড়িমারীতে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পাথর গুঁড়ো করার মেশিন মালিকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সিলোকোসিস রোগীর সেবা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর