বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

চমৎকার রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া। ঝিরিঝিরি বাতাস। দিনটি ছিল ঈদুল ফিতরের। সুন্দর এই সকালে কিশোরগঞ্জের রাস্তায় মানুষের ঢল। সবার গন্তব্য শোলাকিয়া ঈদগাহের দিকে।

শোলাকিয়া ঈদগাহের রেওয়াজ অনুযায়ী নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট, তিন মিনিট ও এক মিনিট আগে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। নিরাপত্তার কারণে এবার ঈদগাহের মেহরাবের দোতলায় ওঠেননি ইমাম। এমনকি খুতবা ছাড়া বাড়তি বয়ানও করেননি তিনি। খুতবার সময় ইমামের ছবি ও ফুটেজ ধারণ করতে সাংবাদিকদের ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করে পুলিশ। এবার শোলাকিয়ায় দুই লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। গত বছর জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকায় এবার মুসল্লির সংখ্যা কম হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। তা ছাড়া নিরাপত্তায় কড়াকড়ি এবং আশপাশের মসজিদসমূহে শোলাকিয়া ঈদগাহের আগেই নামাজ হওয়া মুসল্লি কম হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কিশোরগঞ্জ ছাড়াও ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন। অনেকেই আগের দিন বিকালে ঈদগাহে এসে অবস্থান নেন। তবে নিরাপত্তার কারণে প্রশাসন এবার তাদের ঈদগাহের মেহরাবে থাকতে দেয়নি। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ে কিশোরগঞ্জে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে। জামাত শুরুর আগে একটি ট্রেন ভৈরব থেকে, অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে আসে। জামাত শেষে দুপুর ১২টায় ট্রেন দুটি ছেড়ে যায়। শোলাকিয়ায় সকাল ১০টায় ঈদ জামাত শুরু হয়। এবারের জন্য এ জামাত ১৯০তম ঈদুল ফিতরের জামাত। এ জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদদীন মাসঊদ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসউদ, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা এ মাঠে নামাজ আদায় করেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৮টা। শোলাকিয়া ঈদগাহের কয়েকটি কাতার ভরেছে মাত্র। শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিনা, মুসল্লিদের অনেকের মাঝে তখনো উত্কণ্ঠা। এমন উত্কণ্ঠা নিয়েই মুসল্লিরা আসতে থাকেন শোলাকিয়ার দিকে। এবার জায়নামাজ ছাড়া অন্য কোনো কিছু নিয়ে কাউকে ঈদগাহের রাস্তায় যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি মোবাইল ফোনও নয়। ময়মনসিংহ থেকে আসা মুসল্লি আজহারুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে পেয়ে তার কষ্টের কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ‘এত দূর থেকে এসেছি শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়ব বলে। কিন্তু মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে দিচ্ছে না। এখানে পরিচিত কেউ নেই যে তার কাছে ফোন রাখব।’ বাধ্য হয়ে তিনি পাশের মসজিদে নামাজ পড়েন। তার মতো অনেক মুসল্লির একই অবস্থা। শহরের রাস্তায় গাড়ি চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সকাল ৯টার পর কিছুটা শিথিল করা হয় নিরাপত্তা। জায়নামাজের সঙ্গে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে মুসল্লির ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহে। ১০টার আগেই মাঠ ভরে দক্ষিণ দিকের রাস্তা ও পাকা সেতু পর্যন্ত মুসল্লিতে ভরে যায়। নজিরবিহীন নিরাপত্তায় এবার ভয়, উত্কণ্ঠাকে জয় করে শোলাকিয়ায় শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে এবার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন ছাড়াও পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। মাঠে ও মাঠের বাইরে সাদা পোশাকেও থাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। তাদের সহায়তা করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। প্রত্যেক মুসল্লিকে তল্লাশির মাধ্যমে ঈদগাহে প্রবেশ করানো হয়। মাঠে আটটি ওয়াচ টাওয়ার, প্রবেশমুখে আর্চওয়ে ছাড়াও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। তা ছাড়া মেহরাবের অন্তত ২০ গজ দূর পর্যন্ত বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। ব্যারিকেডের ভিতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়।

 

সর্বশেষ খবর