বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাহাড়ে ধস, এলাকায় নেই ঈদের আমেজ

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

সম্প্রতি রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে বিপুলসংখ্যক মানুষের করুণ মৃত্যু কেড়ে নিল ঈদের সব আমেজ। আসেনি পর্যটক। নেই উচ্ছ্বাস। নেই আনন্দ। সর্বত্র বেদনার ছায়া। এখনো থামেনি বৃষ্টি। কখনো হালকা, কখনো মাঝারি, আবার কখনো ভারি। রাতদিন চলছে মুষলধারে বৃষ্টি। তাই বাড়ছে পাহাড়ধসের শঙ্কা। ঈদের দুই দিন সূর্যের হাস্যোজ্জ্বল রূপের দেখা মেলেনি। গতকাল মেঘাচ্ছন্ন আকাশে আবারও নামে অবিরাম বৃষ্টি। এ বৃষ্টির পানি পাহাড়ে বসবাসরত মানুষকে আবারও নিয়ে যাচ্ছে অজানা শঙ্কায়।

জানা গেছে, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলের সঙ্গে পাহাড়ের হৃদ্যতা দেখে অনেকে অভিভূত হন। তাই প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। কিন্তু এবার রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলোয় ছিল  ভিন্ন চিত্র। একদম অচেনা। রাঙামাটি পর্যটন, রাজবন বিহার, ডিসি বাংলো, সুখী নীলগঞ্জ, শুভলংসহ সব পর্যটন স্পটে পর্যটক নেই বললেই চলে। ঈদের দিন থেকে আজও নেই কোনো পর্যটক। লাভের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা এখন গুনছেন লোকসান। ১৩ জুন রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাঙামাটির রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত পর্যটন। ঈদ উপলক্ষে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন তাদের কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের দেখা পায়নি। পাহাড়ধসের কারণে রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের ভারী যানবাহনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়ভীতি থাকায় পর্যটক কমে গেছে। ফলে লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পর্যটন কমপ্লেক্সের। এ বছর বার্ষিক আয়ের টার্গেট পূরণ নাও হতে পারে বলে মনে করে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনায় আমাদের হোটেলে গত ১৫ দিনের যা বুকিং ছিল তা বাতিল করেছেন পর্যটকরা। এর মধ্যে নতুন কোনো বুকিং আমরা পাইনি। তা ছাড়া ঈদের কোনো পর্যটকের দেখা মেলেনি।’ অন্যদিকে রাঙামাটিতে পর্যটক না আসায় কাপ্তাই লেকে নৌযান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শতাধিক নৌযান মালিক ও শ্রমিক অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ঘাটে বসে বেকার দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই। রাঙামাটি পর্যটন নৌযান মালিক আলাউদ্দিন জানান, ‘রাঙামাটির পর্যটনে এ রকম খারাপ পরিস্থিতি আগে কোনো দিন দেখা যায়নি। পাহাড়ধসর কারণে মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করায় ঈদের মৌসুমেও পর্যটক আসছেন না। পর্যটক না আসায় নৌযান ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিক ও মালিকরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।’ অন্যদিকে একই অবস্থা টেক্সটাইল ব্যবসা, কুটিরশিল্প ও তাঁতবস্ত্র শিল্পে। রাঙামাটিতে পর্যটক না আসার কারণে ধস নেমেছে এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। তবে স্থানীয়রা আশা করেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ শুরু হলে আর বিকল্প সড়ক তৈরি করা গেলে হয়তো আবারও পাহাড়ের মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তখন আসবেন দেশি-বিদেশি পর্যটকও।

সর্বশেষ খবর