শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
শিকারি চক্র বেপরোয়া

লাউয়াছড়ায় সাত হাজার প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে

মোস্তফা কাজল

লাউয়াছড়ায় সাত হাজার প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ৫০ প্রজাতির প্রায় সাত হাজার বন্যপ্রাণী ও পাখির অস্তিত্ব হুমকিতে পড়েছে। কারণ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোর ও শিকারি চক্র। রাতের আঁধারে তারা কেটে নিচ্ছে গাছ। নিধন করছে বন্যপ্রাণী ও পাখি। অভিনব পদ্ধতিতে এসব প্রাণী পাচারও করা হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী, প্রভাবশালী চক্রগুলো প্রাণী শিকার ও গাছ  চুরির মহোৎসবে মেতে উঠেছে। দীর্ঘদিন থেকে এমন তৎপরতা চলতে থাকলেও দায়িত্বশীলরা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে ক্রমেই কমে আসছে মূল্যবান গাছ। অবৈধ দখলদারিত্বেও কমছে লাউয়াছড়ার আয়তন। প্রায় প্রতিরাতেই লাখ লাখ টাকার বিশাল বিশাল গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এ চক্র। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী নিধন প্রতিরোধ কমিটি গত ২৮ জুন বন বিভাগকে একটি চিঠিও দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন থেকে এ বনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেহাল দশায় চলছে উদ্যানটি। ব্যবস্থা নিতে ‘আয়তনের তুলনায় লোক সংখ্যার স্বল্পতাসহ নানা অজুহাত’ তাদের। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পরিযায়ী ছুটে আসে এ বনে। অবস্থান করে মার্চ মাস পর্যন্ত। এ সময় এক শ্রেণির শিকারি বিভিন্ন কায়দায় পাখি নিধন করে। ফাঁদ পেতেও তারা পাখি ধরে নিয়ে যায়। এ ছাড়া গাছ চোরদের উপদ্রব অনেক গুণে বেড়ে গেছে। এসব কারণেই এখন বিপন্ন এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯২৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের বৃক্ষায়ন আজকের এই বন। মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের দেশের রেইন ফরেস্টখ্যাত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এ বনের পূর্ববতী নাম পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, উদ্যানের বিভিন্ন পাহাড়ি টিলা থেকে সেগুন, চাপালিশ, আওয়াল, গর্জন,  মেনজিয়াম, ডুমুরসহ মূল্যবান নানা প্রজাতির গাছ কেটে পাচার করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। অবাধে গাছ চুরির ফলে বিপন্ন হচ্ছে বন। এ ছাড়া বানর, হরিণ, ভল্লুক, সজারুসহ ৫০ প্রজাতির বন্য পাখি ও প্রাণীর বসবাস এ বনে। এ অবস্থায় এসব বন্যপ্রাণীর বাসস্থান ও খাদ্য সংকট তীব্র হচ্ছে। গাছ গাছালি আর লতাগুল্ম কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে বন্যপ্রাণীগুলো লোকালয়ে ছুটে আসছে। লাউয়াছড়া বনবিট অফিসের পেছনে প্রায় দেড় হাজার গজের মধ্যে উঁচু টিলার কাটা গাছগুলোর গোড়া সাক্ষী হিসেবে পড়ে আছে। চিঠিতে বলা হয়, এ বনে আগে হাজার হাজার মূল্যবান নানা জাতের গাছ ছিল। এখন চোরচক্রের কারণে উজাড় হচ্ছে বন। লোক চক্ষুর সামনে থাকায় কোনোরকম যে গাছগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলোও রয়েছে মহা হুমকিতে। চোরচক্র গাছ কেটে ট্রাকযোগে কিংবা অভিনব পদ্ধতিতে বনের পাশের রেলপথে নিজস্ব ট্রলি ব্যবহার করে পাচার করছে। আল-আমিন নামে এক বনকর্মী তাদের জানিয়েছেন, বিশাল আয়তনের এ বনে অল্প কজন বনকর্মীর পক্ষে সশস্ত্র গাছ চোরদের প্রতিহত করা অসম্ভব। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী নিধন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য নুরুল মোহামীন মিল্টন জানিয়েছেন, শিকারি ও চোরচক্রের কারণে এ বনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। স্বল্প জনবল নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বন রক্ষায় পর্যাপ্ত লোকবল, অস্ত্রাদি ও যানবাহন সুবিধার প্রয়োজন। চোরদের প্রতিরোধ করতে নিয়মিত তদারকি করতে হচ্ছে। কিছু চোরাই গাছও উদ্ধার করা হয়েছে। অনেক গাছ চোরের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর