বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতাই ‘অভিশাপ’ চট্টগ্রামের

সামান্য বৃষ্টিতেই নদী হয়ে যায় নগরী ♦ তিন কারণকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারছে না বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। সময়ের ব্যবধানে সরকার ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পরিবর্তন হলেও, নিরসন হয় না জলাবদ্ধতার দুর্ভোগের। সামান্য বৃষ্টিতেই ‘নদী’-তে পরিণত হয় নগরী। সর্বশেষ এক মাসে পাঁচবার বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম। মাস্টারপ্ল্যান ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া, খাল দখল এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণকে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। এ সমস্যা উত্তরণে কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিতভাবে নালা নির্মাণ, খাল-নালাকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার প্রবণতা, অপরিকল্পিত পাহাড় কাটা এবং মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। এ সমস্যা উত্তরণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন অন্যতম চ্যালেঞ্জ আমাদের। এ চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। বহদ্দারহাট বারইপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্প শেষ হলে জলাবদ্ধতা সমস্যার কিছুটা নিরসন হবে। এ ছাড়া চসিক এবং চীনা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭টি স্লুইস গেট, বড় খালসমূহের দুই পাশে রিটেইনিং ওয়াল এবং খালসমূহের ড্রেজিংয়ের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ১৪৪ কিলোমিটার খাল এবং প্রায় ছয়শ কিলোমিটার নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ সালাম বলেন, ১৯৯৫ সালে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হলেও ২২ বছরে মাস্টারপ্ল্যানের এক শতাংশও বাস্তবায়ন হয়নি। এ বছর থেকে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আশা করছি জলাবদ্ধতা অনেকটা নিরসন হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীতে পরিকল্পনাবিহীন ভবন-স্থাপনা নির্মাণ, নালা ও পানি চলাচলের পথগুলোকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা, মাস্টারপ্ল্যান ও ড্রেনেজ ম্যাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না করা, অপরিকল্পিত পাহাড় কাটা এবং আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। ১৯৯৫ সালে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ওই প্ল্যানে তিনটি নতুন খাল খনন, নদী ও সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত খালের মুখে স্লুইসগেট স্থাপন, বিলুপ্ত খাল পুনরুদ্ধার, বিদ্যমান খালগুলোকে গভীর ও প্রশস্তকরণের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ২২ বছর অতিবাহিত হলেও বাস্তবায়ন হয়নি ওই ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান। এ ছাড়া নগরের জলাবদ্ধতার জন্য নগরের মধ্য দিয়ে যেসব খাল-নালা, নর্দমা রয়েছে সেগুলো বেদখল হয়ে যাওয়াকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। নগরীর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৭টি খাল ‘খাল খেকো’র কবলে পড়ে এখন নালায় পরিণত হয়েছে। এসব খালের আশপাশে বসবাসকারী লোকজন খাল ভরাট করে ভবন ও দোকান তৈরি করে ক্ষান্ত হননি। খালগুলোকে আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া চাক্তাই খাল, রাজাখালী খালের মুখে কর্ণফুলী নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় পানি কর্ণফুলী নদীতে নামতে পারে না। আবার কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার থাকলে সে সময় যদি বৃষ্টি হয় তাহলে নগরীর খাল-নালা নর্দমা দিয়ে প্রবাহিত পানি আর কর্ণফুলীতে নামতে পারে না। ফলে খুব তাড়াতাড়ি এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভারি বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি হয় আরও ভয়াবহ।

সর্বশেষ খবর