বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুর্দশার শেষ নেই পাহাড়ে

রাঙামাটি প্রতিনিধি

পাহাড়ের মানুষের যেন দুর্যোগ-দুর্দশার শেষ নেই। বৃষ্টিতে বাড়ছে পাহাড়ধসের শঙ্কা। অন্যদিকে ধসে বিধ্বস্ত রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখন আতঙ্কে ঘুম হারা পাহাড়ের মানুষ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় রাঙামাটিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। খাদ্য, অর্থনীতি, যোগাযোগ, পরিবহন, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে নানা সংকট। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমেছে মারাত্মক ধস। পরিবহন ব্যয় বেড়ে হয়েছে দেড় থেকে দুই গুণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দীর্ঘ ২২ দিনেও চালু হয়নি রাঙামাটি- খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই চরম দুর্ভোগে আছে রাঙামাটি-কুতুকছড়ি-নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ি-মানিকছড়ি-মহলছড়ি অঞ্চলে বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমেছে ধস। তাই তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক সংকটও। দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকট। তাছাড়া ভারি বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি ময়লা ও ঘোলাটে হওয়ায় তৈরি হয়েছে খাবার পানির সংকটও। অভিযোগ উঠেছে, রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে নৌপথে চলাচল ব্যবস্থা করা হলেও  চালকরা সুবিধা বুঝে হাতিয়ে নিচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগের পর সাময়িকভাবে সড়ক মেরামতের ফলে ২১ জুন রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে হালকা যান চলাচল শুরু হয়। এ ছাড়া রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই, ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙালহালিয়া-বান্দরবান, রানীরহাট-কাউখালী, বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু এবং বাঙালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে হালকা যান চলাচল করলেও এখনো ৫টি সড়কই মারাত্মক ঝুঁকিতে। ব্যাপক ধসের কারণে ৫টি সড়কের বিভিন্ন স্থান বিধ্বস্ত রয়েছে। ফলে সরাসরি পর্যাপ্ত মালামাল পরিবহন করা যাচ্ছে না। সরাসরি বাস সার্ভিস চালু না থাকায় রাঙামাটি থেকে লোকজনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে। ফলে ভোগান্তি কাটেনি যাতায়াতকারী লোকজনের। সড়কের সাপছড়ির শালবনে বিধ্বস্ত অংশে মেরামত করা সড়ক দিয়ে এক টনের অধিক মালামাল পার করা যাচ্ছে না। পরিবহন সংকটের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে আম ,কাঁঠাল, কলা, আনারসসহ কোটি কোটি টাকার কাঁচা পণ্য। এতে অপূরণীয় লোকসানের শিকার অসংখ্য মানুষ। অন্যদিকে দীর্ঘ দিন ধরে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও সংস্কারে অগ্রগতি না হওয়ায়  ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। এ ব্যাপারে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, রাঙামাটি-মানিকছড়ি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের ৮ কিলোমিটার স্থানে কুতুছড়ি খামারপাড়া হতে কেচিং পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারব্যাপী সড়ক মেরামত কাজ চলছে। আগামী এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে ওই সড়কে যান চলাচল করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি-কাপ্তাই, ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বাঙালহালিয়া-বান্দরবান, রানীরহাট-কাউখালী, বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু এবং বাঙালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোতেও মেরামত কাজ দ্রুত চলছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে এসব সড়কে মেরামত কাজ করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে সাপছড়ি-শালবাগান এলাকায় ভারী যানবাহনের চলাচল উপযোগী করতে বেলি ব্রিজের কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

কক্সবাজারে পাহাড়ধসে একজনের মৃত্যু : কক্সবাজারের মহেশখালীতে পাহাড়ধসে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম পাহাড়ধসে নিহতের বাড়ি ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নুরুল কবির জানান, হোয়ানক মোহরাকাটা এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে মোনার আলম (৪০) সকালে প্রাকৃতিক কাজ সারতে বাড়ির বাইরে পাহাড়ের পাদদেশে যান। এ সময় হঠাৎ পাহাড়ের কিছু অংশ ভেঙে তার গায়ের ওপর পড়লে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর