বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিরাজগঞ্জের শীতলপাটি

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের শীতলপাটি

সিরাজগঞ্জে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের শীতলপাটি। এখানকার শীতলপাটির সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে শিল্পটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা আর সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হলে এ শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে মনে করছেন শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ ও কামারখন্দ উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চানপুর, হরিপুর, ঝাঐল ও আটঘরিয়া গ্রামে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার উন্নতমানের শীতলপাটি। এখানকার শীতলপাটির ঐতিহ্য প্রায় পাঁচশ বছরের। বংশপরম্পরায় প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এ শিল্পকে তারা জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসেবে অবলম্বন করছে। শীতলপাটির মূল কাঁচামাল বেত গাছ। বাড়ির আশপাশে ও সব ধরনের জমিতেই বেত গাছ চাষ হয়। চারা রোপণের পর দু-তিন বছরেই বেত গাছগুলো পাটি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। বেত গাছ কাটা, বেতি তোলা ও নানা ধরনের রঙের কাজ পুরুষরাই করে থাকে। আর নিপুণ হাতে বাহারি ধরনের পাটি তৈরির কাজ করে নারীরা। গ্রামে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে নববধূরা মেহেদি হাতে নিপুণভাবে বুনন করছে শীতল পাটি। বসে নেই স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে মজুরি কম, পুঁজি সংকট, কাঁচামালের অভাব ও বাজারজাতকরণসহ নানা সমস্যা থাকলেও নারীদের দৃঢ় মনোবল এ শিল্পটিকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে। নববধূ কাঞ্চনা রানী ও বীনা রানী জানান, বউ হয়ে যেদিন ঘরে এসেছি, তার পরদিন থেকেই শীতল পাটি বুননের কাজ শুরু করেছি। শীতল পাটি তৈরি করাই আমাদের মূল পেশা। এটিই আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। হরিপুর গ্রামের কারিগর রামু ও লক্ষণ চন্দ্র জানান, শীতল পাটি পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য। প্রায় পাঁচশ বছর ধরে এ গ্রামে শীতল পাটি তৈরি করা হচ্ছে। আগে এগুলো কলিকাতাসহ বিভিন্ন দেশে যেত। পুঁজি সংকটের কারণে এখন এ শিল্পের করুণ অবস্থা। স্বল্পসুদে ঋণ পেলে শীত মৌসুমে তৈরি করে স্টক করে গ্রীষ্ম মৌসুমে বিক্রি করে লাভবান হওয়া যেত। কিন্তু পুঁজি না থাকায় তৈরি করার পরই অল্প দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বয়োবৃদ্ধ গৌর চন্দ্র জানান, শীতল পাটি বুনন ছাড়া আমরা অন্য কোনো কাজ জানি না। তিনি জানান, বাজারজাত করণেও নানা সমস্যা রয়েছে। প্রতি শুক্রবার ঝাঐল গ্রামে শীতল পাটির হাট বসে। সিলেট, রংপুর, রাজশাহী ও নওগাঁসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। আবার অনেকে বাড়ি থেকেও কিনে নিয়ে যায়। সিলেটের পাইকার হামিদুর রহমান জানান, এখান থেকে অল্প দামে কিনে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকি। এতে ভালোই লাভবান হওয়া যায়। কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন জানান, শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ চালু নেই। তবে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, উৎপাদিত শীতল পাটি যাতে সহজভাবে বাজারজাত করা যায় সে জন্য নির্দিষ্ট হাটের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও এদের স্বল্প ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর