বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুপুর ২টা বাজলেই গেটে তালা

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দুপুর ২টা বাজলেই গেটে তালা

রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ঈশা খাঁ রোডে তিন একর জায়গাজুড়ে বিশাল অবকাঠামোয় প্রতিষ্ঠিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল। কিন্তু জরুরি বিভাগ না থাকায় শুধু বহির্বিভাগে দেওয়া হচ্ছে সেবা। এর মধ্যে আবার দুপুর ২টা পার হলেই বন্ধ হয়ে যায় বহির্বিভাগও। তাই হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও বিপদের সময়ে কোনো সেবা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। গতকাল দুপুর ১টায় সরেজমিন কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারে হালকা জটলা। চারটি লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় ১০০ মানুষ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কক্ষ ও মেঝে। প্রতিটি কক্ষেই আছেন চিকিৎসক ও মেডিকেল অফিসার। সিরিয়াল অনুযায়ী অপেক্ষমাণ রোগীদের ডেকে নিচ্ছেন হাসপাতালের আয়ারা। হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি আছে আলট্রাসনোগ্রাফি, এক্স-রে, ইসিজি, ইকো ও রক্তের কয়েকটি টেস্টের ব্যবস্থা। মাত্র ১০০ টাকায় এক্স-রে, আর আলট্রাসনোগ্রাফি ফি মাত্র ২০০ টাকা। দালালের দৌরাত্ম্য না থাকায় এখানে নির্ধারিত মূল্যেই সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। কিন্তু বেলা ১২টা বাজলেই বন্ধ হয়ে যায় প্যাথলজি। ফলে পরে যাদের টেস্ট করানোর দরকার, তাদের আবার পরদিন আসতে হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর ধরে চালু করার প্রক্রিয়ায় থাকা এই হাসপাতাল সহযোগিতা, মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পেরিয়েছে চড়াই-উতরাই। মে মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কুর্মিটোলা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল গণিকে এই হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেনা হয় হাসপাতালের বেশ কিছু যন্ত্রাংশ। এরপর ২৩ জন চিকিৎসক এবং অল্প কিছু জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই হাসপাতাল। চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন এখানে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করলেও জরুরি বিভাগ না থাকায় বিপদের সময় কাজে আসছে না এ হাসপাতাল। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা ভ্যানচালক আলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে গত রাত থেকে পেটব্যথায় কাতরাচ্ছিল। কিন্তু রাতে হাসপাতাল বন্ধ থাকায় নিয়ে আসতে পারিনি। আর ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের নাই। এখানে ১০ টাকার টিকিট হলেও ডাক্তাররা ভালো করে কথা শোনেন। সব সমস্যা শোনার পর ওষুধ লিখে দেন। আবার কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকেই পাওয়া যায়। এই হাসপাতালে জরুরি সেবা থাকলে বিপদে আমরা অনেক উপকার পেতাম।’ এই হাসপাতালের ইতিহাস অনেক পুরনো। ২০০১ সালে যে হাসপাতাল চালু হওয়ার কথা, বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এ বছর তা সেবা প্রদান শুরু করে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটির অর্থায়নে উত্তরায় তিন একর জমির ওপর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয় ২০০১ সালে। ওই বছরের ১০ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। একই বছরের অক্টোবরে সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এরপর ২০০২ সালে আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি ওই হাসপাতাল থেকে তাদের সহায়তা তুলে নেয়। একপর্যায়ে চুক্তি করে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর হাসপাতাল ভবনটিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে আমেরিকান হসপিটাল কনসোর্টিয়ামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতালে উন্নীত করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। এরপর হাসপাতালটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় নেওয়ার প্রস্তুতির মুহূর্তে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হলে লিজ চুক্তি বাতিলের বিষয়টি ঝুলে যায়। পরে সরকারের আওতায় এনে হাসপাতাল চালু করা হয়। বর্তমান সেবার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল গণি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিবু নিবু অবস্থায় মাস দুয়েক আগে আমাকে হাসপাতালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২৩ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে আমরা সেবা দেওয়া শুরু করেছি। ছয় মাসের মধ্যে এ হাসপাতালে ৩০০ শয্যার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি সব ধরনের জরুরি সেবার ব্যবস্থা এ বছরের মধ্যেই হবে। রোগীদের সেবা দিতে এবং হাসপাতাল সম্পর্কে জানাতে উত্তরাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর