বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
চিড়িয়াখানার হালচাল শেষ

বদলে যাচ্ছে সবকিছু

মোস্তফা কাজল

বদলে যাচ্ছে সবকিছু

চিড়িয়াখানায় উত্ফুল্ল হরিণ শাবক —রোহেত রাজীব

বদলে যাচ্ছে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিশ্বমানে উন্নীতকরণে মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফলে নতুন এক আধুনিক রূপ পেতে যাচ্ছে মহানগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র জাতীয় চিড়িয়াখানা। এ ছাড়াও নতুন করে কেনা হচ্ছে দেড় শতাধিক বিদেশি প্রাণী ও পাখি। বিনিময়ের আওতায় আনা হচ্ছে বাঘ ও সিংহ। আরও যোগ করা হচ্ছে নানা ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া বিশ্বমানের আওতায় চিড়িয়াখানায় দর্শকের জন্য থাকছে ভাসমান হোটেলে বসে বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ। থাকছে নাইট সাফারি। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন ধরনের দুই হাজারের বেশি প্রাণী ও পাখি রয়েছে। এসবের পাশাপাশি প্রাণী ও পাখির খাঁচাগুলো পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হচ্ছে। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আধুনিক ভেটেরিনারি হাসপাতাল। এখানে বাঘ, সিংহ ও হাতির মতো বৃহৎ বন্য প্রাণীর চিকিৎসা ও অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছে। গতকাল সরেজমিন জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। সূত্র জানায়, প্রায় দুই মাস আগে চিড়িয়াখানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হকের সভাপতিত্বে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর মহাপরিকল্পনার একটি খসড়া অনুমোদনের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া জাপান সরকারের কাছ থেকে বিশ্বমানের প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প সহায়তা হিসেবে চিড়িয়াখানার তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়নে ৪৮ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ প্রকল্পের আওতায় চিড়িয়াখানায় আগত শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও ও ভিডিও প্রোগ্রাম তৈরি করে প্রদর্শনের ব্যবস্থার কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চিড়িয়াখানায় দুটি ফুড সেন্টার চালু করা হয়েছে। ফুড সেন্টার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে দর্শনার্থীরা উন্নতমানের খাবার কেনাকাটা করতে পারছেন। বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা হবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। প্রাণী ও পাখি কেনার অংশ হিসেবে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদেশি প্রাণী ও পাখি সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাণী বিনিময় কার্যক্রমের আওতায় কক্সবাজার জেলার ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক থেকে এক জোড়া জলহস্তির বিনিময়ে এক জোড়া বাঘ ও এক জোড়া সিংহ আনা হচ্ছে। এ ছাড়া মহাপরিকল্পনা অনুমোদন পাওয়ায় আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজার থেকে ১৫৪ প্রাণী ও পাখি সংগ্রহ করা হবে।

এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২৬ প্রজাতির ১১৪টি দুষ্প্র্রাপ্য প্রাণী ও পাখি সংগ্রহ করা হবে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে লাল বানর, গণ্ডার, উটপাখি, আফ্রিকান সিংহ, সাদা সিংহ, চিত্রা হায়েনা, সাদা পেলিকান পাখি, ধূসর পেলিকান পাখি, সারস, কেশোয়ারি পাখি কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৩ প্রজাতির ২০০টি প্রাণী ও পাখি সংগ্রহ করা হবে। ভোঁদড়, গোখরা সাপ, লাউডগা সাপ, দাঁড়াশ সাপ, সোনালি সাপ, লালমুনিয়া পাখি, হোয়াইট পিংক কবুতর, আঁচিল মুরগি, ময়না, হলুদ টিয়া, তিতির কেনা হবে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে। সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে প্রাণী সংগ্রহ না করা এবং বয়স্ক প্রাণীগুলো মারা যাওয়ায় চিড়িয়াখানার কিছু খাঁচা খালি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রাণী পুষ্টি কর্মকর্তা আবু সাঈদ কামাল বাচ্চু বলেন, কিছু প্রাণীর সঙ্গী মারা যাওয়ায় এগুলো একা হয়ে গেছে। নতুন প্রাণী আসার পর সেগুলো জুটি খুঁজে পাবে। জানা গেছে, চিড়িয়াখানায় বর্তমানে রয়েছে ১০ প্রজাতির ৪০টি মাংসাশী প্রাণী। তৃণভোজী প্রাণী আছে ২৩ প্রজাতির ২২১টি। ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ আছে ২৫ প্রজাতির ২৪৭টি। পাখি আছে ৫৬ প্রজাতির ১০৬টি। ফিশ একুরিয়ামে আছে ২৩ প্রজাতির ৮০১টি দেশি-বিদেশি মাছ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর