বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভয়াবহ ঝুঁকিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

খেলাপি ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো নন-পারফর্মিং লোনস (এনপিএল) বা খেলাপি ঋণ, কম মুনাফা, বড় ধরনের পুঁজি ঘাটতি এবং ব্যালেন্স শিট দুর্বলতায় ভুগছে। এ সমস্যার মূলে রয়েছে দুর্বল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা।

গত ২৬ জুন প্রকাশিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় নতুন করে মূলধন জোগান দিতে গত অর্থবছরের  শেষ মাসে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর মাধ্যমে দেশটির ব্যাংকিং খাত যে ক্রমবর্ধমানভাবে বিভিন্ন কঠিন ঝুঁকি মোকাবিলা করছে, তার লক্ষণ বোঝা যাচ্ছে। আর এসব চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা অপর্যাপ্ত। এতে বলা হয়, দশকের পর দশক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বড় ও দাপুটে ঋণগ্রহিতাদের কাছে মোটা অঙ্কের ঋণ দিয়ে আসছে। তারা অর্থ পরিশোধে গাফিলতির জন্য পরিচিত। ঋণখেলাপিদের শাস্তি দেওয়ার নজির বিরল। এর পরিবর্তে একই ঋণগ্রহিতাদের ফের ঋণ প্রদানের অনুমোদন দিতে ঋণ পুনর্বিন্যাস করা হয় নিয়মিত। ঋণখেলাপিদের শাস্তি দেওয়া, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনা জোরদার করার জন্য তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে আরও অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে।  এ দুর্বলতার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোসহ পুরো ব্যাংকিং খাত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদিকে আইএমএফ তাদের সাম্প্র্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, অতিরিক্ত তারল্যের কারণে ব্যাংকিং খাতে বেশকিছু ঝুঁকি রয়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতে পরিস্থিতির উন্নয়ন নির্ভর করবে সমস্যা মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। এসব দুর্বলতার পেছনে বহুলাংশে দায়ী বড় অংকের ঋণগ্রহিতাদের দেওয়া ঋণ, যাদের অর্থ পরিশোধের তাগিদ কম। পাশাপাশি রয়েছে আইনি সীমাবদ্ধতা, যা অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রয়েছে মোট ব্যাংকিং খাতের সম্পদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। তাদের সঙ্গে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি বিশেষায়িত উন্নয়ন ব্যাংক, ৪০টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি ব্যাংক।

এতে আরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্মত হওয়া অঙ্কের টার্গেটের প্রতি কঠোরভাবে জবাবদিহির আওতায় রাখতে হবে ব্যাংকগুলোকে। আর সংস্কারের মনোযোগ দিতে হবে তত্ত্বাবধানের উন্নয়ন, লোন কনসানট্রেশনের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ঋণ উদ্ধারের জন্য আইনি ও আর্থিক অবকাঠামোর উন্নয়নের দিকে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সমস্যার সমাধান শুরু হতে হবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দিয়ে, কিন্তু এখন পর্যন্ত যা খুব সীমিতই দেখা যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর