বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

২০০ ট্যানারির মধ্যে সরেছে মাত্র আটটি

বাদল নূর

দীর্ঘ অপেক্ষার পর রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ২০০টি ট্যানারির মধ্যে মাত্র আটটি সেখানে কাজ শুরু করেছে। আরও ৪৫টি ট্যানারি তাদের মালামাল হাজারীবাগ থেকে সাভারে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ট্যানারির মালামাল স্থানান্তর করা হচ্ছে সাভারের হেমায়েতপুরের চর নারায়ণপুরের ট্যানারি শিল্পনগরীতে। এদিকে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোয় বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সাভারের শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫৫ জন ট্যানারি মালিককে। বাকি ট্যানারিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে আশঙ্কা করছেন। চৌধুরী লেদার অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মো. রায়হান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করতে মালিকদের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু সরকার দিচ্ছে মাত্র ১৬০০ কোটি টাকা। যে কারণে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে বিলম্ব হচ্ছে। ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, বরাদ্দকৃত প্লটগুলোর মালিকানা এখনো তারা বুঝে পাননি। তা ছাড়াও সাভারে সড়ক, সড়কবাতি, ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন, ছোট কালভার্ট, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনসহ নানা অবকাঠামোর কাজ চলমান আছে। ট্রিটমেন্ট প্লান্টের (বর্জ্য শোধনাগার) নির্মাণকাজও সম্পন্ন হয়নি। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রের দাবি, ট্যানারি মালিকদের সব অভিযোগ সত্য নয়। টুকিটাকি যেসব সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। আনোয়ার ট্যানারির মালিক দিলজাহান ভুইয়া বলেন, টাকার অভাবে অধিকাংশ ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না। ট্যানারি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প ব্যবসা করতে হবে তাদের। তা ছাড়া প্লটের মালিকানা তাদের নামে হয়নি বলেও জানান তিনি। ফলে ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারছেন না তারা। জানা গেছে, পরিবেশবিদ ও বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিশিল্প স্থানান্তর করে সাভারের চরনারায়ণপুরে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ট্যানারি মালিকদের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। একই বছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) সাভারে চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বিসিক।

 পরে মালিকরা এ শিল্প স্থানান্তরের জন্য সরকারের কাছে সহজ সুদে ঋণ চান। এর পরে ২০০৫ সালে ট্যানারি স্থাপনের জন্য চরনারায়ণপুরে ২০০ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন চামড়া শিল্পনগরীতে ১৫৫টি কারখানা স্থাপনের জন্য প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে স্থানান্তরের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। এর পরেও কাজ শেষ হয়নি। পরে ব্যয় না বাড়িয়ে আবারও ২০১২ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন হয় একনেকে। এ সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কোনো কিছুতেই ট্যানারি স্থানান্তর না হওয়ায় অবশেষে ট্যানারি মালিকদের প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। ট্যানারি মালিকদের প্রত্যেককে জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেয় আদালত।

সর্বশেষ খবর