বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কেঁচো সারে দিনবদল মোস্তাকের

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

কেঁচো সারে দিনবদল মোস্তাকের

কেঁচো সারে দিনবদল হয়েছে মোস্তাক আহমেদের। সার উৎপাদনের পাশাপাশি তিনি এখন বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ৩০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে। এমনকি তাদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে কেঁচো। ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী এলাকার বাসিন্দা বাদল হায়দারের বাড়ির ছাদে বাগান করা শখ। কিন্তু তার ছাদ বাগানে সবজি অথবা ফুল গাছে কদিন পরপরই আক্রমণ করে পোকা। কিন্তু বছর খানেক ধরে তার সবজির ফলন মিলছে বেশ। আর বাগানের ফুলও শোভিত করছে ছাদকে। বাদল হায়দারের ছাদ বাগানের এমন পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বছর খানেক ধরে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ব্যবহার করছেন তিনি। আর এর জোগান দিচ্ছেন কোম্পানি এগ্রোটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী হলেন মোস্তাক আহমেদ। জানা গেছে, মাত্র বছর ছয়েক বয়স হলেও এই প্রতিষ্ঠানটিতে এখন কেঁচোর সংখ্যা ৬০ হাজার। আর এই ৬০ হাজার কেঁচো থেকে মাসিক সার উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দেড় টনের মতো। যা বছরে ১৮ টন। ২০১১ সালে মাত্র ৩ হাজার কেঁচো নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। সেসময় মাসিক উৎপাদনও ছিল মাত্র ৫০ কেজি। শুধু উৎপাদন নয় বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের বেড়েছে জমির পরিধিও। দুই শতক জমির ওপর এই ব্যবসা শুরু করে এখন ঠেকেছে ৬ শতকে। আর পুঁজি হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকার মতো। এতে করে মাত্র ৬ বছরেই নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন কোম্পানি এগ্রোটেকের স্বত্বাধিকারী মোস্তাক আহমেদ। সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরতলির বেলতলী এলাকার ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, সার উৎপাদনের পাশাপাশি তিনি এখন বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ৩০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে। এমনকি তাদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে কেঁচো। যা দিয়ে ইতিমধ্যে তারা বিষমুক্ত সার উৎপাদনও করছেন বলে জানিয়েছেন রাকিব নামের এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। রাকিব বলেন, কোম্পানি এগ্রোটেক থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। সেই সঙ্গে আমাদের নিজস্ব জমিতে এই কেঁচো সার নিয়ে চাষও করছি। এতে করে এখন আমরাও স্বাবলম্বী হচ্ছি। কোম্পানি এগ্রোটেকের স্বত্বাধিকারী মোস্তাক আহমেদ বলেন, এ এলাকার কৃষকরা এখন আমার উৎপাদন করা সার ব্যবহার করছেন। এতে করে তাদের ফলন যেমন ভালো হচ্ছে তেমনি টাকাও সাশ্রয় হচ্ছে। ময়মনসিংহের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বগুড়া এবং রংপুরেও সারের চালান পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে আমি আর্থিকভাবে এখন বেশ লাভবান। এ ছাড়াও বিষমুক্ত সবজি প্রকল্পের জন্য ময়মনসিংহ সদর উপজেলা অফিসে ৩ ধাপে ৬০০ কেজি সার দেওয়া হয়েছে। নগরীতে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যেসব গাছ লাগানো হয়েছে সেখানেও এই কেঁচো সার ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত সার বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষা করিয়েছি। যেখানে শতভাগ বিশুদ্ধতার প্রমাণপত্র পেয়েছি। তিনি বলেন, তবে আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিষমুক্ত শাক-সবজি আন্দোলনে সহযোগিতা করা। সেই সঙ্গে ইট-কাঠের এই নগরীর প্রতিটি ছাদে কৃষি সম্প্রসারণ করা।

সর্বশেষ খবর