শনিবার, ৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নৌকার মিজানের সঙ্গে বিএনপির মঞ্জু

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

নৌকার মিজানের সঙ্গে বিএনপির মঞ্জু

খুলনার ৬টি সংসদীয় এলাকায় (৯৯, ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৪ ও ১০৫) বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সব কটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোটগত নির্বাচন হলে খুলনা-৫ ও ৬ আসনে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এর মধ্যে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য দুই ডজনের বেশি প্রার্থী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন প্রবীণ, নবীন, সাবেক আমলা, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদরাও। তবে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় প্রচার- প্রচারণার শীর্ষে রয়েছেন দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতারা।

সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে খুলনা-২ ও ৩ আসন নিয়ে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কাছে মাত্র ১৬৭০ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। গেল নয় বছরে এখানকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকখানি বদলেছে। ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মিজানুর রহমান সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবাধে মিশেছেন। ভোটারদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এদিকে সিনিয়র সিটিজেন ও মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ফলে আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে শিল্পাঞ্চল হিসেবে বিবেচিত খুলনা-৩ আসনে মনোনয়ন লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে টেক্কা দিতে প্রচারণায় রয়েছেন আরেক কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল। এরই মধ্যে তিনি দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছেন। বিশেষ করে সাংগঠনিক দক্ষতায় তৃণমূলের তরুণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন এস এম কামাল। এ আসনে বিএনপির তরুণ নেতা নগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠুর প্রতিপক্ষ সাবেক এমপি কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম। মনোনয়ন লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নিজেদের প্রতিপক্ষ থাকায় মানুষের আগ্রহ রয়েছে এই আসনকে ঘিরে। খুলনা-১ আসন (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) থেকে বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে এ এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নের জন্য জেলা সহসভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস এমপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন একই দলের সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডল। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় প্রচারণায় রয়েছেন। খুলনা-২ আসন (সদর-সোনাডাঙ্গা) বরাবরই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাবেক স্পিকার বিএনপির শেখ রাজ্জাক আলী এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়া বিএনপির নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর রয়েছে যথেষ্ট প্রভাব। তবে ২০১৪ সালে এখানে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শক্ত অবস্থান গড়তে সক্ষম হয়েছেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল, বিয়ে-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাড়া-মহল্লায় রয়েছে এমপি মিজানের অবাধ পদচারণ। কখনো আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে, উন্নয়নের দাবিতে কখনো রাজপথে আবার কখনো বস্তির (নিম্ন আয়ের মানুষের বাসস্থান) মধ্যে দাঁড়িয়ে হয়তো ক্যারাম খেলায় মেতেছেন। তৃণমূলের রাজনীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামে মিজান-মঞ্জুর বর্তমান অবস্থান সুদৃঢ়। ফলে এ আসনে ভোট লড়াই হবে তীব্র। খুলনা-৩ এলাকা (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) শিল্পাঞ্চল হওয়ায় চাকরির সুবাদে সারা দেশের মানুষ এখানে বাস করেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য যোগ্য ব্যক্তিকেই বার বার নির্বাচিত করেছেন এখানকার ভোটাররা। তবে এ আসনে গেল দুবারের নির্বাচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবার পড়েছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। দলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে সাংগঠনিক প্রচারণায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি এ আসনের নেতা-কর্মীসহ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন। কেন্দ্রেও রয়েছে তার সমান গ্রহণযোগ্যতা। ফলে এস এম কামাল খুলনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নযুদ্ধে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নগর কোষাধ্যক্ষ এস এম আরিফুর রহমান মিঠু। দলীয় টিকিট পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম। জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু প্রার্থী হতে পারেন এ আসনে। খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি, এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ নেতা মো. কামরুজ্জামান জামালও দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন। প্রার্থিতার দৌড়ে রয়েছেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ এবং কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন হেলাল। ঢাকা ও লন্ডন থেকে এরই মধ্যে সবুজ সংকেত পেয়ে ঘর গোছাচ্ছেন তিনি। খুলনা-৫ আসনে (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উপজেলা সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহাবুব উল ইসলাম। ১১ বছর ধরে সাংগঠনিক তৎপরতায় দলের তৃণমূল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন তরুণ প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ার। অন্যদিকে জোটগত নির্বাচন হলে এখানে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। আর আলাদা নির্বাচন হলে বিএনপির শক্ত প্রার্থী দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান। তিনি বিগত দিনে এলাকার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সাবেক এমপি ডা. গাজী আবদুল হক ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান আলী মুনসুরও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। খুলনা-৬ আসনে (কয়রা-পাইকগাছা) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন অ্যাডভোকেট নূরুল হক এমপি, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব আলী সানা, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা গাজী মোহাম্মদ আলী, চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার প্রেমকুমার মণ্ডল। তবে বাঘা বাঘা এই নেতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা আক্তারুজ্জামান বাবু। তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে তরুণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইতিমধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন বাবু। জোটগত প্রার্থী হিসেবে মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আলোচনায় রয়েছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মন্টু ও ছাত্রদলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক। এরই মধ্যে ছাত্রনেতা রফিক জনসংযোগ পর্যায়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির জেলা সিনিয়র সহসভাপতি সাংবাদিক মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামীকাল : সাতক্ষীরার সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা

সর্বশেষ খবর