শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

শ্রীহীন দশা কাটিয়ে তুলতে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ

সঞ্জয় কুমার দাস, পটুয়াখালী

শ্রীহীন দশা কাটিয়ে তুলতে প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ

নানা কারণে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার শ্রীহীন দশা হয়েছে। যেমন সাম্প্রতিক বৈরী আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সবুজ বেষ্টনীর গাছ-পালা উপড়ে গেছে এবং সেগুলো যত্রতত্র পড়ে আছে। সৈকতের জিরো পয়েন্টে ভবনের বিম ও পিলারের বড় বড় অংশ, আর সবখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। সৈকতজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ভবনের ভাঙাচোরা অংশ, সাগরে নেমে যার আঘাতে প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছেন পর্যটকরা। সৈকতের বালু সরে গিয়েও বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে সাংঘাতিক রকমের শ্রীহীন দশা হয়েছে কুয়াকাটার। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াকাটার ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে আছে। সৈকত লাগোয়া এলজিইডির বায়োগ্যাস প্লান্ট কাম ডাকবাংলো নিলামে বিক্রি করার পর নিলাম ক্রেতা প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে গেলেও ভবনের নিচের অংশের বড় বড় স্লাব, বিম, পিলার, ফ্লোরের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখে গেছেন। সৈকতের শূন্য পয়েন্টের প্রায় একশ মিটার এলাকাজুড়ে এগুলো ছিটিয়ে পড়ে আছে। এমনকি সাগর সৈকতের বিশাল এলাকাজুড়ে এলোমেলোভাবে গড়ে উঠেছে ছোটবড় অসংখ্য দোকানপাট। এ অব্যবস্থাপনা দেখার যেন কেউ নেই। ধারণা পাওয়া গেছে, এই অভিভাবকহীন অবস্থায় আগত পর্যটকদের কুয়াকাটা সম্পর্কে ধারণা দিনে দিনে পাল্টে যাচ্ছে। আগ্রহ হারাতে বসেছেন অনেকেই। ঘুরতে আসা এক পর্যটক খুলনার ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ জানান, ভবনের ভাঙা বড় বড় অংশ সৈকতে পড়ে থাকায় বিচের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। জোয়ারের সময় বড় বড় ঢেউ উপভোগ করতে এসে, বা গোসল করতে নেমে আহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইকো পার্কের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে গাছপালা উপড়ে পড়ে রয়েছে। ঘুরতে আসা পর্যটক লিজা আক্তার বলেন, কুয়াকাটার সৌন্দর্যের কথা শুনে ঘুরতে এসেছি। সাগর দেখে বেশ মুগ্ধ হয়েছি, কিন্তু সৈকত অপরিচ্ছন্ন। যেখানে সেখানে ডাবের খোসা ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে। এগুলো পরিষ্কার করা উচিত, না হলে তো এখানে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবেন না। রাতে ঘোরাফেরা করতে ভয় হয়। কারণ সৈকতে আলোর কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে এখানে আইনশৃঙ্খলা বেশ ভালোই মনে হয়েছে আমার কাছে। ঝালকাঠির কলেজ শিক্ষার্থী জুয়েল আহমেদ বলেন, আমরা কজন সহপাঠী মিলে কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। সাগরের ঢেউ উপভোগ করলাম। কিন্তু সৈকতে দালানের কিছু পিলার, বিম ও দেয়াল পড়ে থাকায় জোয়ারের সময় আমি ও আমার দুই বন্ধু গোসল করতে নেমে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আঘাত পেয়েছি।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, সৈকতে ডাবের খোসা আর ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিচ দেখভালের দায়িত্বে থাকা কমিটিকে বহুবার বলার পরও তা অপসারণ করা হয়নি। এগুলো অপসারণ করে দ্রুত পর্যটদের পদচারণা নির্বিঘ্ন করতে হবে। তাহলে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে।

কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, কুয়াকাটার সৌন্দর্য রক্ষা আর দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি আছে শুধু নামেমাত্র। তাদের কোনো সভা হয় না। কোনো কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি। নতুন পৌরসভা, তাই আমাদের জনবল কম। তারপরেও পৌরসভার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখতে কুয়াকাটা উন্নয়নে অন্যান্য কমিটিগুলো পৌরসভাকে সহযোগিতা করলে কাজ আরও সহজ হবে। কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সদস্য সচিব ও কুয়াকাটা হলিডে হোমসের ম্যানেজার এমডি ফারুকুজ্জামান বলেন,  সৈকতের পরিচ্ছন্নতার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তাই আমরা দেখলেও কিছু করতে পারছি না। সৈকত অপরিচ্ছন্ন আর ভবনের কিছু পিলার, বিম ও দেয়ালের কিছু অংশ বিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলি দেখে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান বলেন, পর্যটকের সমস্যা নিরসনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক সৈকত সাজানো হবে। যাতে পর্যটকদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা যায়।

সর্বশেষ খবর