জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী গতকাল পালিত হয়েছে। সকাল থেকে দিনটি উপলক্ষে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকায় অবস্থিত নুহাশ পল্লীতে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং এতিমদের খাবার বিতরণসহ দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজন। লেখকের পরিবারের সদস্যরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন। হলুদ পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি পরিহিত ‘হিমু’ নুহাশ পল্লীতে আসেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরাও নুহাশ পল্লীতে এসে হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করেন।
নুহাশ পল্লীর আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশ পল্লীতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ও দোয়ায় অংশ নেন। দুপুরে এতিম ও আগত অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। গতকাল সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে থাকেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা। হলুদ পাঞ্জাবি পরা হিমু পরিবারের সদস্যরাও আসেন। কবরে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনে লেখক, সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষে নুহাশ পল্লী লোকারণ্য হয়ে যায়। দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের লক্ষ্যে গতকাল সকাল পৌনে ১১টার দিকে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তার দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিতকে সঙ্গে নিয়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুত্রদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দোয়া করেন। এ ছাড়াও শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, মা তহুরা আলী, নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, হুমায়ূন ভক্তরা মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় হুমায়ূন ভক্ত শতাধিক হিমু ও রূপার চরিত্র সেজে প্রিয় লেখকের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং কবর জিয়ারত করেন। মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়স্থান নুহাশ পল্লী ভালোমতো আছে। তিনি যে সবুজ, বৃক্ষ পছন্দ করতেন, সে সবুজে বৃক্ষছায়া মাখামাখি হয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদের স্কুল ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ’ ভালো অবস্থানে আছে। এ বছর স্কুলের শিক্ষার্থীরা জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে। বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে এ-প্লাস পেয়েছে। শাওন আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি স্বপ্ন—ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ। সেটি আমার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। যারা এ দেশের গুণীজন আছেন, নীতিনির্ধারক আছেন, তাদের কাছে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি, সবাই মিলে উদ্যোগ নিন। এর আগে হুমায়ূনের কবর জিয়ারত করেন তার তিন বোন সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ, রোকসানা আহমেদ এবং কাকলী প্রকাশনীর নাসির আহমেদ সেলিম, তাম্রলিপি প্রকাশনীর তারিকুল ইসলাম রনিও তাদের সঙ্গে কবর জিয়ারত করেন। সকালে হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে আসেন কয়েকজন প্রকাশক ও অভিনেতা। এদের মধ্যে অনন্যা প্রকাশনীর মালিক মাজহারুল ইসলাম, অবসর প্রকাশনীর প্রকাশক আলমগীর রহমান ও প্রতীক প্রকাশনীর নূর-ই-মোস্তাকিন আলমগীর, নাট্য অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেল এবং মাজনুন মিজান প্রমুখ ছিলেন। নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনায় নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে গতকাল জন্মস্থান নানাবাড়ি মোহনগঞ্জের শেখবাড়িতে বাদ জোহর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে লেখকের পৈতৃকভিটা কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শহীদস্মৃতি বিদ্যাপীঠের উদ্যোগে শোকর্যালি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এর আগে স্কুলের শিক্ষার্থীরা কালোব্যাজ ধারণ করে, বিদ্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।