শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি খুলনা চট্টগ্রামে

টানা বৃষ্টিতে কোথাও বুক পর্যন্ত পানি

প্রতিদিন ডেস্ক

জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি খুলনা চট্টগ্রামে

বর্ষায় হাঁটু সমান পানি খুলনার প্রধান সড়কগুলোয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দিনভর টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর বিস্তীর্ণ এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল নতুন করে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। নগরের কোথাও কোথাও কোমর থেকে বুক পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। এতে মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজে উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো খবর—

চট্টগ্রাম : মুষলধারে বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দাদের প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে পঞ্চমবারের মতো জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর আগে গত ৩১ মে, ১২ জুন, ১৮ জুন এবং ৩ জুলাই অতিবর্ষণে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম নগর। সর্বশেষ গতকালও জলাবদ্ধ হয় এই বাণিজ্যিক নগর।

গতকাল দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। বিকালে প্রবল বর্ষণে নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। চরম সংকট দেখা দেয় যানবাহনের। ফলে বিকাল ও সন্ধ্যায় ঘরমুখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।  অন্তহীন ভোগান্তি সঙ্গী হয় নগরবাসীর। পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় কষ্ট। বৃষ্টির পানিতে নগরীর সড়ক, গলি ও উপগলিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকালের বর্ষণে নগরের বাকলিয়া, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, চকবাজার, বহদ্দারবাড়ি সড়ক, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখাননগর, হালিশহর, ছোটপুল, বড়পুল, এক্সেস রোড, পোর্টকানেকটিং রোড, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, বাকলিয়াসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি জমে যায়। অনেকের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬১ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত এবং নদী বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে।

অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম বলেন, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আবহাওয়া অফিস ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। ফলে আজও চট্টগ্রাম ও সিলেটে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময় পাহাড়ধসের সম্ভাবনাও আছে। এদিকে নগরবাসীর অভিযোগ, জলাবদ্ধতা নগরের মানুষের এখন কপাল লিখন। তাই দুই মাসের মধ্যে পাঁচবার এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দরনগরীর মতো একটি শহরে যদি দুই মাসে পাঁচবার জলাবদ্ধতা হয়, তাহলে ব্যবসাসহ সামগ্রিক ক্ষেত্রের অবস্থা কী হবে তা ভাবাও কষ্টকর।  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, গত কয়েকদিন বৃষ্টি না থাকা নগরের নালা, ড্রেন ও খালগুলো সংস্কার কাজ পুরোদমে চলে। ফলে গতকালের বৃষ্টিতে পানি বেশি সময় ধরে জমে থাকেনি। কেবল নগরের কিছু নিম্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা হয়। তিনি বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টি এক সঙ্গে হলেই নগরে পানি জমে যায়। জোয়ারের পানি না জমার জন্য চসিক এরই মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে।  খুলনা : মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে খুলনায় গতকাল দিনভর ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, দাকোপ ও রূপসার কয়েকশ ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বেড়িবাঁধ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের হাজারো পরিবার। খুলনা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খুলনায় ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টিতে মহানগরীর শান্তিধাম মোড়, শামসুর রহমান রোড, রয়েলের মোড়, পিটিআই, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, শিববাড়ী, কেডিএ এভিনিউ, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর, দৌলতপুর, রূপসা স্ট্যান্ড রোডসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন সড়কে হাঁটু সমান পানি জমেছে। অনেকের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিগত সময়ে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারসহ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও সুফল মেলেনি। তিনি শহরের যেসব পয়েন্টে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, তা চিহ্নিত করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে দিনভর বিরামহীন বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মানুষ অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অধিকাংশ স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল কম। ভাসমান মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও দু-একদিন এই অবস্থা থাকতে পারে।

নোয়াখালী : টানা দুদিনের ভারি বর্ষণে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, অফিস, জেলা সিভিল সার্জন অফিস, বাসভবন ও জেলা খাদ্য অফিসে হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সরেজমিন গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ ছাড়া নোয়াখালী পৌরসভার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার নয়টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে জেলা শহর মাইজদী প্রধান প্রধান সড়ক হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। গত কাল সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ার সঙ্গে নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর