সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

এখনো জট চট্টগ্রাম বন্দরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনীতির মেরুদণ্ড চট্টগ্রাম বন্দরে এখনো ২৮ হাজারের বেশি পণ্যবাহী কনটেইনারের জট। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টা কাজ করলেও বেলা ১১টার আগে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে পাওয়া যায় না। বন্দরে ২৬ দিন পর্যন্ত কনটেইনার ফেলে রাখেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীরা এর জবাবে বলছেন, ‘এত দিন কনটেইনার পড়ে থাকলে নিলামে দিন।’ বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জটের এই সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণে আজ সেখানে জরুরি বৈঠকে বসছেন স্টেকহোল্ডার বা অংশীজনেরা। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে ওই সভায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যানসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার, চট্টগ্রাম চেম্বার ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি, বিজিএমইএ, শিপিং এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের।

জানা গেছে, বন্দরে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও বার্দিং (বন্দরে ভেড়া) করতে পারছে না জাহাজ। দুটি গ্যাংট্রি ক্রেন নষ্ট থাকায় বাকি দুটিতে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। বন্দর কাস্টমস, ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। এই জটের নেপথ্যে রয়েছে এবারের ঈদের ছুটি, ব্যাপকহারে পণ্য আমদানি এবং লাগাতার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব কারণে জাহাজ ও কনটেইনার জটে নাকাল অবস্থায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরে জেটি ও বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে শতাধিক জাহাজ। জটের কারণে বন্দরে কনটেইনার খালাসের জায়গা নেই বললেই চলে। বন্দরে অতিরিক্ত অবস্থানের কারণে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারীদের খরচ বাড়ছে। কনটেইনারে নির্ধারিত সময়ের বেশি পণ্য রাখার জন্য আমদানিকারকদের বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা দিতে হচ্ছে। আমদানি করা কাঁচামাল বিলম্বে পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা। এ প্রসঙ্গে চবক সদস্য (অপারেশন) ফিরোজ আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে আমাদের বসে থাকতে হয়। কারণ তখন আমদানিকারক ও তার প্রতিনিধি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাজ শুরু হয়। আমরা ২৪ ঘণ্টাই বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করি। কিন্তু স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) যারা আছেন, তাদের আমরা পাই না। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার আগে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে পাই না। অন্যান্য সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের পাই না, যারা কনটেইনার সরবরাহের কাজে সহযোগিতা করবেন। এখন যে ২৮ হাজার ৮৮৩ কনটেইনার আছে, তা কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি করেনি।’ বন্দরে কনটেইনার সর্বোচ্চ ২৬ দিন পর্যন্ত পড়ে থাকে বলেও অভিযোগ করেন চবকের এই কর্মকর্তা। এসব অভিযোগের জবাবে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যদি ২৬ দিন বন্দরে কনটেইনার পড়েই থাকে, তাহলে তা নিলামে দিচ্ছে না কেন। এক হাজার কনটেইনারের মধ্যে দু-একটার সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু নিজের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বন্দরকে বন্ধ করতে হবে। এ অবস্থায় আমরা বুঝতে পারছি না যে কী করা উচিত। রফতানি বিপর্যয়ের কারণে দেশ যদি পিছিয়ে পড়ে, তখন কিন্তু ক্রেন দিয়েও তুলে আনা সম্ভব হবে না।’ বন্দরের যেসব যন্ত্রপাতি দরকার, তা দ্রুত কিনতে হবে বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার জট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক কনটেইনার ওঠানামার রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। তিনি শনিবার চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘গত এক বছরে ৫০ হাজার ঘনফুট বন্দরের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় যোগ করেছি। প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনারকে এক টিইইউ একক ধরে হিসাব করা হয়। বন্দরে কনটেইনার জট কমানোর দুটি রাস্তা আছে। হয় খালি কনটেইনার অফ ডকে পাঠাতে হয়, অথবা বন্দরের ভিতর ধারণক্ষমতা যদি আরও বাড়ানো যায়। সেটা হচ্ছে।’ এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের সাম্প্রতিক অচলাবস্থা নিয়ে ১৮ জুলাই সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করেন নৌমন্ত্রী। বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, কনটেইনার জট খুলতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগবে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বলেন, এত সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয় না। ওই বৈঠকে বন্দরের সংকট দ্রুত উত্তরণে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করার কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত তা হয়নি বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর