সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নবীন-প্রবীণ লড়াই গাজীপুরে

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

নবীন-প্রবীণ লড়াই গাজীপুরে

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজধানী ঢাকার নিকটতম জেলা গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে (১৯৪, ১৯৫, ১৯৬, ১৯৭ ও ১৯৮) মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ পোস্টার, ব্যানার সাঁটিয়ে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিতে শুরু করেছেন। গত রমজানেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইফতার পার্টি দিয়ে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। তৃণমূল নেতাদের সমর্থন আদায়ে প্রার্থীরা নানা তত্পরতা শুরু করেছেন। মনোনয়ন পেতে এলাকায় দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি এসব প্রার্থী দলের হাইকমান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। এ জেলায় মনোনয়ন যুদ্ধে পুরনোদের সঙ্গে নতুন মুখের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রধান দুই দলেই মনোনয়ন যুদ্ধে লড়বেন একাধিক নেতা। একাধিক আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে চমকও থাকতে পারে। তাই নানা হিসাব-নিকাশ করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের পথ চলছেন। জেলার পাঁচটি আসনের সবকটিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে। বসে নেই জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী। কাযর্ত সবকটি আসনেই ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।  গাজীপুর-১ আসনে (কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ হতে ১৮ নং ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এবারও প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। নবম সংসদে ওই আসন থেকে তিনি প্রথম এমপি হন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল ও কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন শিকদার মনোনয়ন চাইবেন। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন। এ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মুজিবুর রহমান ও মো. হুমায়ুন কবির খান নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসন থেকে ১৯৭৯ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন চৌধুরী তানভীর আহম্মেদ সিদ্দিকী। পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি বিএনপির প্রার্থী হতেন। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হতে পারেননি। পরবর্তীতে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি দল থেকে বহিষ্কারের পর আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে একাধিক নেতার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। তবে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই নতুন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইছেন। জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস ছালাম নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। গাজীপুর-২ (গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একাংশ ও গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) থেকে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত সংসদ সদস্য ও শ্রমিক লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। আহসান উল্লাহ মাস্টার ২০০৪ সালের ৭ মে খুন হলে ওই বছরই অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে রাসেল নির্বাচিত হন। গত ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসান উদ্দিন সরকার। এখানে শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি মো. সালাহ উদ্দিন সরকারও প্রার্থী হবেন বলে নির্বাচনী মাঠে প্রচার আছে। গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার মিয়া এবার নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর উপজেলা এবং গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন) আসনের নির্বাচনে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি। এ আসন থেকে তিনি পর পর পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে গেলেও আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে প্রবীণ এ নেতার বিকল্প হিসেবে তার ছেলে অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয়ও প্রার্থী হতে পারেন। দুর্জয় এলাকায় ব্যাপকভাবে তত্পর। এ ছাড়া গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ শিকদারও জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বেশ কয়েকজন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বর্তমান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। তিনি সেই নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। তিনি গাজীপুর সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গাজীপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কোনো সিনিয়র নেতা নেই। তিনি আগামী গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী না হলে সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন এমনটিও মনে করছেন তার সমর্থকরা। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা এস এম রুহুল আমীন, শ্রীপুর থানা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান ফকির, থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. আবদুল মোতালেব প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়া গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল ইসলাম জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন।  গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন) আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি থাকতে চান। ২০১২ সালে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ মন্ত্রিত্ব ও পরে সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগের পর উপনির্বাচনে তার বোন সিমিন হোসেন রিমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এ আসন থেকে তিনি এমপি হন। তবে বঙ্গতাজের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল প্রার্থী হতে পারেন এমনটাও তার সমর্থকদের মুখে মুখে। অপরদিকে তাজউদ্দীনের ভাই অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দিন আহমেদ খানও ইতিপূর্বে প্রার্থী হয়েছিলেন। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক মন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। তবে হান্নান শাহর ভাই বিচারপতি শাহ  আবু নঈম মমিনুর রহমানের নামও বিএনপিতে আলোচনায় আছে। জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ উপজেলা ও গাজীপুর মহানগরীর আংশিক, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি আবারও প্রার্থী হতে চান। ২০০৮ সালেও তিনি এ আসন থেকে সরাসরি এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক এমপি গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামানও মনোনয়ন চাইবেন। আখতারুজ্জামান ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। চিত্রনায়ক ফারুকও প্রার্থী হতে পারেন এমন কথা কারও কারও কাছে শোনা যায়। ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি এ কে এম ফজলুল হক মিলনের নামই নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনো তিনি নিজের মতো করেই এলাকা গোছাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আজম খান এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন।

সর্বশেষ খবর