সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
দখিনের জানালা শেষ

নদী-খাল-চরে দখলবাজি

রাজনৈতিক পরিচয়ে দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সঞ্জয় কুমার দাস, পটুয়াখালী থেকে ফিরে

উপকূলীয় জনপদ পটুয়াখালীতে নদী-খাল-চরে দখলবাজির অন্ত নেই। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে দখলে মরিয়া স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেখানে নদী দখল করে তোলা হচ্ছে দোকান থেকে শুরু করে বহুতল স্থাপনা। ফলে নৌযান চলাচলে বাড়ছে বিড়ম্বনা। কমছে নৌপথ। এসব অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করছে স্থানীয় প্রশাসন। সরেজমিন এ চিত্রের দেখা মিলেছে। এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো. মোকতার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেসব স্থানে খাল দখল হয়েছে, তা দখলমুক্ত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে প্রাকৃতিকভাবে অনেক খাল ভরাট হয়ে গেছে। তা খননে কোনো নির্দেশনা বা প্রকল্প আকারে অর্থ বরাদ্দ নেই। সরকারের নির্দেশনা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ ক ম মোস্তফা জামান বলেন, নৌ চলাচল ও পানির প্রবহমান ধারা অব্যাহত রাখতে খাল ও নদী উন্মুক্ত থাকা জরুরি, যা এখন প্রায় নেই। এ জন্য নদী শাসন করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে উপকূলের নদীপথে ঢুকতে কষ্ট হয়। ভবিষ্যতে নদী ভরাট ও নৌপথ বন্ধ হওয়া ঠেকাতে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। খাল খনন করে সেগুলো প্রবহমান রাখতে হবে। পটুয়াখালী : দখল ও খননের অভাবে পটুয়াখালী সদর উপজেলার খালগুলো এখন মরা। প্রায় ২৫০টি খালে পানিপ্রবাহ নেই। নিয়ম-নীতি না মেনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে প্রাকৃতিকভাবে প্রবহমান জলাশয় কমে যাচ্ছে। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ। পটুয়াখালী শহর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে বল্লবপুর গ্রাম। ওই গ্রামের করমজাতলা খাল এখন পানিশূন্য। খালটি দখলদাররা বাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়ায় জোয়ার-ভাটা হচ্ছে না। প্রায় ১৫ বছর ধরে খালটি মরা। পটুয়াখালী শহরের মাঝগ্রাম খালটি এখন প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। খালটি ভরাটের মাধ্যমে দখল করে অনেকে বাড়ির সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। কেউ বাড়ির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে, কেউবা আবার পুকুর বানিয়ে দখলে নিয়েছে। এ অবস্থায় খালটির উত্তর মাঝপাড়া গ্রাম থেকে স্বাধীনতা সড়ক পর্যন্ত পুরোটা দখল হয়ে গেছে। মত্স্যবন্দর আলীপুর ও মহীপুর গড়ে ওঠা যে নদীর দুই পাড়ে, সেই শিববাড়িয়া নদীটির দুই পাশ ক্রমেই দখল হয়ে যাচ্ছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা এতই প্রভাবশালী যে, তারা প্রশাসনের ধার ধারেন না। শিববাড়িয়া নদীর দুই পাড়ে চলছে দখলের মহোৎসব। কিন্তু এটি দেখার কেউ নেই। চলছে পাকা ঘরসহ বহুতল ভবন নির্মাণ আর নদীতীর দখলের মহোৎসব। দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে নদীটি। কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া-টিয়াখালী দোন নদী দখল করে বহুতল স্থাপনা নির্মাণ করেছেন কেরামত হাওলাদার নামে এক প্রভাবশালী। ভূমি অফিসের মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে নতুন বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকায় এই বহুতল স্থাপনাটি তোলা হলেও অপসারণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। অন্যদিকে আন্ধারমানিক নদীতে আমির বেপারি নামে এক ব্যবসায়ী লঞ্চঘাট-সংলগ্ন মাছবাজার এলাকায় তীরসহ নদী দখল করে তুলছেন স্থাপনা।

কুয়াকাটা পৌরসভার বর্জ্য নির্গমনের একমাত্র পথ ঘাটলার খালটির দুই পাড় দখল করে স্থাপনা তোলার হিড়িক চলছে। শুধু খালপাড় নয়, চাটাই দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করে তোলা হচ্ছে বহুতল স্থাপনা। ফলে হাতছাড়া হচ্ছে খালসহ সরকারি খাসজমি। স্থানীয় প্রশাসন দখল বন্ধে নেয়নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। ফলে দখলদারদের দৌরাত্ম্য চলছে ফ্রি-স্টাইলে। এতে করে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন ব্যাহতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বগা লঞ্চঘাট এলাকায় নদীর জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, লোহালিয়া নদীর পূর্ব পাশে বগা লঞ্চ ও ফেরিঘাট। দুই ঘাটের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০০ ফুট। এর মাঝখানে ডুবোচর জেগেছে। সেখানে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের নগরের হাট সেতু-সংলগ্ন এলাকায় সরকারি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন আরেকজন প্রভাবশালী। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। সরেজমিন দেখা যায়, ওই খালের মধ্যে প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ টিনশেড ঘর রয়েছে। এ ছাড়া সরকারি ১০টি খাল ভরাট ও বেদখল হয়ে যাচ্ছে দুমকিতে। এলাকার একশ্রেণির প্রভাবশালীর দখলে চলে যাওয়া খাসজমিতে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, দোকান ঘর ও স্থাপনা। আর এভাবেই কৃষিপ্রধান এলাকার সেচ সুবিধার সহায়ক সরকারি খালগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। দুমকির পীরতলা বাজারের খাল, সাতআনি খাল, জামলার খাল, ফেদিয়ার খাল, কচ্ছপিয়া, গোদার খাল, মুরাদিয়ার বোর্ড অফিস বাজার-সংলগ্ন খালসহ সরকারি রেকর্ডে থাকা ১০টি খাল ভরাট হয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সরকারি খাল ভরাট করে দোকান ঘর ও স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর