সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরিচয় জানার পরই হত্যা করা হয় এএসপি মিজানকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিচয় জানার পরই হত্যা করা হয় হাইওয়ে পুলিশের সহকারী কমিশনার (এএসপি) মিজানুর রহমান তালুকদারকে। যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা মিজানকে প্রাইভেট কারে উঠানোর কিছু সময়ের মধ্যেই তার পরিচয় জেনে যায়। নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্তে মাথায় আঘাত ও শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয় মিজানকে। গ্রেফতারের পর আদালত ও পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছে শাহ আলম ওরফে বুড্ডা (৬২) নামের এক ছিনতাইকারী। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে শাহ আলম। গতকাল দুপুরে তাকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজ্জাদুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়। বিকালে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শনিবার রাতে শাহ আলমকে গ্রেফতার করা হয়। ২১ জুন সকালে রাজধানীর রূপনগর বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন বিরুলিয়া ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশে গলায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় মিজানুর রহমানের (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের সাভার সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন। ওই ঘটনায় মিজানুরের ছোট ভাই মাসুম তালুকদার রূপনগর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, ২১ জুন ফজরের আজানের পর সহযোগী মিন্টু, কামাল ওরফে ফারুক ও জাকিরসহ উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরে একটি মসজিদের পাশে প্রাইভেট কারে যাত্রীবেশে বসে ছিল শাহ আলম। একই সময় এএসপি মিজানুর ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় তারা মিজানকে প্রাইভেট কারে উঠতে বলে। গাড়িতে ওঠার পর ফারুক বুঝতে পারে মিজান সরকারি লোক। তখন ফারুক পালানোর জন্য গাড়ি থেকে নেমে যায়। এ সময় মিন্টু বলে, ‘তুই এভাবে পালিয়ে বাঁচতে পারবি না।’ তখন ফারুক আবার গাড়িতে ওঠে। সিটিটিসি প্রধান জানান, প্রাইভেট কারের চালকের আসনে ছিল জাকির। শাহ আলম সামনে বসা ছিল। তারা গান বাজিয়ে ও লাইট বন্ধ করে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে জসীম উদ্দিন রোড হয়ে হাউস বিল্ডিং এলাকায় যায়। পরে তারা উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের দিকে যায়। চলন্ত গাড়িতে এএসপি মিজানের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে পেছনের সিটে বসা মিন্টু। ফারুক ও মিন্টু এএসপি মিজানের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছিল।

এএসপি মিজানকে প্রাইভেট কারে থাকা ঝুটকাপড়ের টুকরা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে থাকে ছিনতাইকারীদের একজন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিজান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। টহল পুলিশের ভয়ে ছিনতাইকারীরা মেইন রোড ব্যবহার না করে ১০ নম্বর সেক্টর থেকে গলিপথ দিয়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছায়। বিরুলিয়া ব্রিজের আগে রাস্তার বাঁ পাশে ঘন গাছপালা দেখে সেখানে জাকির গাড়ি থামায়। মিন্টু ও ফারুক দ্রুত মিজানকে মৃত অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার বাঁ পাশে রেখে গাড়িতে উঠে চলে যায়।

মনিরুল ইসলাম জানান, সাধারণত এসব ছিনতাইকারী একজন যাত্রীকে টার্গেট করে গাড়িতে উঠিয়ে তাকে দুই পাশ দিয়ে চেপে ধরে কোনো কিছু দিয়ে হত্যা করে। এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটিই হয়েছে। তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের ভয় পায়। তাদের ছেড়ে দিলে পরে বিপদ হতে পারে ভেবে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া অন্য তিনজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ছিনতাইয়ে ব্যবহূত গাড়িটি উদ্ধারে অভিযান চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন ও ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মাসুদুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর