সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন

মানবাধিকারে কোনো উন্নতি দেখছে না যুক্তরাজ্য

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাজ্যে পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চাপ বিদ্যমান ছিল। আর ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থি হামলা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতাও ছিল অব্যাহত। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক যুক্তরাজ্য সরকারের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এসব কথা বলা হয়। রিপোর্টে ‘মানবাধিকার অগ্রাধিকার দেশসমূহ’ শীর্ষক ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদে ৩০টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকেও রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, ২০১৬-এর ১ জুলাই ২২ জনের প্রাণহানি হওয়া ঢাকার  হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলাসহ বাড়তে থাকা সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কঠোর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বাছবিচারহীন গ্রেফতার এবং আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলোকে জড়িয়ে গুমের নানা অভিযোগ উঠেছে। নারী ও মেয়েদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ এখনো রয়েছে। আর ব্যাপক পরিসরের অপরাধকর্মের জন্য মৃত্যুদণ্ড এখনো বৈধ একটি শাস্তি। নতুন আইন আনা হয়েছে যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করে দিতে পারে। সুশীল সমাজের গ্রুপগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে ২০১৬ সালে পাস হওয়া বিদেশি অনুদান আইন হয়তো বাংলাদেশি এনজিওগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করার সামর্থ্যকে এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ সরকার গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে বাংলাদেশি আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আচরণ করতে অনুরোধ জানায়। যুক্তরাজ্য এ বিষয়েও স্পষ্ট ছিল যে, ভুক্তোভোগী বা সন্দেহভাজন দোষী ব্যক্তির পৃথক পরিস্থিতিগুলো যেমনই হোক না কেন, দণ্ডমুক্ততা কোনোভাবেই থাকা উচিত নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরোয়ানাবিহীন গ্রেফতার এবং রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ধারাগুলো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে আমরা সরকারকে উৎসাহিত করছি।

২০১৬ সালে রাবাত নীতি বাস্তবায়ন এবং হেট স্পিচ প্রতিহত করতে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কীভাবে বৈধ সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করা উচিত সেসব বিষয়ে একটি পর্যালোচনায় সমর্থন দিয়েছিল হাইকমিশন। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্য উগ্রপন্থি হামলার ঝুঁকিতে থাকা ব্লগারদের সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা ব্যক্তিদের আশ্রয় ও সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলোর যোগসূত্র করে দিতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। ম্যাগনা কার্টা তহবিলের মাধ্যমে আমরা বিচারকদের রায় প্রদানের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রস্তুত করার কাজে সহায়তা করেছি। প্রতিবেদনের শেষাংশে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের সামর্থ্য শক্তিশালী করতে আমরা সব বাংলাদেশি রাজনৈতিক দল এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত থাকব। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে— এমন একটি আস্থা প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ থাকবে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে। অমানবিক আচরণ এবং বিচার ব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোয় যথাযথ প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের জন্য আমরা চাপ দেব। আর বাংলাদেশের সমর্থন থাকা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড সমুন্নত রাখতে আমরা বাংলাদেশি সরকারকে উৎসাহিত করব। একই সঙ্গে আহ্বান জানাব, বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জের পরিবেশ খোলা রাখতে।

সর্বশেষ খবর