মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

অ্যাপসে বিক্রি হয় ইয়াবা

তারুণ্যের পছন্দের শীর্ষে ইমো-ভাইবার

আনিস রহমান

প্রযুক্তির এই যুগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চলে ডালে ডালে, মাদক ব্যবসায়ী ও এর ক্রেতারা চলে পাতায় পাতায়। জঙ্গিরা যেমন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য বেছে নিয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ঠিক তেমনি অবৈধ মাদক ব্যবসাতেও এর সংশ্লিষ্টরা ব্যবহার করছে বিভিন্ন অ্যাপস। এর মধ্যে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জনপ্রিয় ইমো ও ভাইবার। ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-ভোক্তাদের কেউ কেউ ব্যবহার করছে আলোচিত থ্রিমা, উইচ্যাট, মেসেঞ্জারের মতো অ্যাপস। অনেকেই আবার নিজেরা পৃথক অ্যাপও তৈরি করে নিচ্ছে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। মাদক ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, অনেক মাদক ব্যবসায়ী মনে করেন মোবাইল ফোনে কথা বলা কিংবা এসএমএস-এর মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাইলেই মোবাইল ফোন ট্যাকিং করে তাদের ধরে ফেলতে পারে। কিন্তু ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপসগুলোতে যোগাযোগে সেই ঝুঁকি অনেক কম। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ অঞ্চলের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া জানান, গত ৯ মার্চ এলিফেন্ট রোড ও কলাবাগানের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালান তারা। সেখানে আসমা আহমেদ ডালিয়া ও তার ছোট বোন স্বপ্না আক্তার নামের দুজনকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা এবং নগদ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, চট্টগ্রামের এক বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সপ্তাহে তিনবার দেড় লাখ পিস ইয়াবা সংগ্রহ করত। ওই ব্যবসায়ী পথের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠিয়ে দিত। পরে তার লোকই কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ইয়াবার চালান তুলে পরে ডালিয়া আহমেদ ও স্বপ্না আক্তারের কাছে পৌঁছে দিত। পুলিশ-র‌্যাব ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস ও মাদকের অপব্যবহার রোধে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাথাব্যথার নতুন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা অপরাধ (সাইবার অপরাধ) মোকাবিলার জন্য। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনকে মডেল বলে মনে করছেন তারা। দেশ দুটি সাইবার অপরাধ মোকাবিলা ও নজরদারির ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। মাদক বিশেষ করে ইয়াবা বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই ভুয়া পরিচয় দিয়ে তৈরি আইডি ব্যবহার করছে। তাদের মধ্যে অনেকে প্রয়োজন শেষে দ্রুত সেই আইডির তথ্য মুছে ফেলছে। এরা আবার নতুন আইডি খুলছে। ফলে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। দ্রুত প্রযুক্তির পরিবর্তন ও সরকারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ না থাকায় মাদক বিস্তারের বিষয়টি নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর