রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্ষিতা ও মায়ের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ

গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় গণধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া ও যশোর

বগুড়ায় কলেজে ভর্তির নাম করে ছাত্রীকে ধর্ষণের পর বিচারের কথা বলে মারপিট এবং নির্যাতনের পর ধর্ষিতা ও তার মা’র মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশ ধর্ষিতা ছাত্রীকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি করে দিয়েছে। এঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগ নেতাসহ ৪জনকে গ্রেফতার করেছে। ধর্ষণ, নির্যাতন ও মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে বগুড়া সদর থানায় ধর্ষিতার মা বাদি হয়ে মামালা দায়ের করেছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে ও জাতীয় শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর শাখার আহবায়ক তুফান সরকার, তুফানের সহযোগী একই এলাকার দুলু আকন্দের ছেলে আলী আজম দিপু (২২), শহরের কালিতলা এলাকার জহুরম্নল হকের ছেলে রম্নপম (২২) ও খান্দার সোনারপাড়ার মোখলেছার রহমানের ছেলে আতিক (২৩)।

জানা যায়, বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকায় মা ও বাবার সাথে ভাড়া বাসায় বসাবাস করে ধর্ষিতা ওই কিশোরী। সে এবার বগুড়া শহরের জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে। তার বাবা একজন ড়্গুদে ব্যবসায়ী। জেলার শাজাহানপুর উপজেলার রাতাইল বন্দরে তার একটি খাবারের ছোট হোটেল রয়েছে। এসএসসিতে এ পস্নাস না পাওয়ার কারণে ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারবে না বলে কিশোরীর বাড়ির পাশেই বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুরের বাসিন্দা বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহবায়ক প্রভাবশালী নেতা তুফান সরকারের (২৪) সাথে যোগাযোগ করে। তুফান সরকার কিশোরীকে ভাল কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে ১৭ জুলাই সকালে নিজ বাড়িতে ডেকে পাঠায়। সেখানে সুযোগ পেয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে তুফান সরকার। এঘটনার পর ২৮ জুলাই রাতে তুফান সরকারের স্ত্রী মোছা. আশা ও আশার বোন বগুড়া পৌরসভার সংরড়্গিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রম্নমকি বিচারের কথা বলে ধর্ষিত ওই কিশোরী এবং তার মাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আটক রেখে ধর্ষিত কিশোরী ও তার মাকে নির্যাতন, মারপিট করে মাথার চুল কেটে নেড়ে করে দেয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ রাতে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। ২৮ জুলাই শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তুফান সরকারসহ ৪জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের অভিযানের সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তার বোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রম্নমকি পলাতক রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ধর্ষিতা কিশোরীর মা বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় নারী নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগে পৃথক ধারায় দুইটি মামলা দায়ের করেছেন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তুফান সরকার ওই কিশোরীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। পরে তাদের মারপিট, নির্যাতন এবং মাথার চুল নেড়ে করে কেটে দিয়েছে। মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বগুড়া সদর থানার ওসি এমমাদ হোসেন জানান, এজাহারে তুফান সরকারের বিরম্নদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। অন্য আসামীদের বিরম্নদ্ধে ওই কিশোরী এবং তার মাকে (মামলার বাদী) অপহরণ, মারপিট ও শস্নীললতাহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ওই কিশোরী জানায়, ১৭ জুলাই তুফান তাকে ধর্ষণ করে। তুফান রাজনৈতিকভাবে খুব প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কাউকে বলতে পারেন নি। এরপর তুফানের স্ত্রী আশা তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরড়্গিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রম্নমকিসহ তুফানের সহযোগী ৮/১০জনকে সঙ্গে নিয়ে ২৮ জুলাই শুক্রবার দুপুরে প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে নেড়ে করে দিয়েছে।

গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় গণধর্ষণ! : গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করায় এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। শুক্রবার দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী অভিযোগ করেন, তার ওপর সংঘটিত নির্যাতনের ব্যাপারে অভয়নগর থানায় মামলা করতে গেলেও নেওয়া হয়নি। পরে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। এর পর থেকেই কথিত স্বামী ও তার বন্ধুদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই তরুণী ও তার পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী নিজেই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় তার সঙ্গে মা জোহরা খাতুন, চাচাতো ভাই মুস্তাফিজুর রহমান শোভন, মারুফ শেখ, ইসমাইল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুণী বলেন, প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের বজলুর সরদারের ছেলে জনি সরদারের সঙ্গে গোপনে তার বিয়ে হয়। এরপর তিনি বাবার বাড়িতে থাকলেও মাঝেমধ্যে স্বামীর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক হতো। একপর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লে তিনি বিয়ের বিষয়টি সবাইকে জানানোর জন্য জনিকে বলেন। কিন্তু বিয়ের বিষয়টি জনি অস্বীকার করতে শুরু করেন। ৭ জুলাই একই এলাকার সাইফার শেখ মেয়েটিকে যশোরের নওয়াপাড়া বাজারের ‘আল সেলিম’ হোটেলে যেতে বলেন। এ হোটেলটির মালিক জনি। এখানে জনি ও তার বন্ধুরা ওই তরুণীর গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা ওই তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এদিকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জনি সরদার ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই তরুণীর সঙ্গে বিভিন্ন ছেলের শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নি। তার গর্ভের সন্তানও আমার না। বিষয়টি ডিএনএ টেস্ট করালে পরিষ্কার হবে। যেহেতু বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে, সে কারণে আদালতেই আমি তথ্য-প্রমাণ দেব।’

সর্বশেষ খবর