বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সচিবালয়ে পানি থৈ থৈ

ঘণ্টার বৃষ্টিতেই ডুবল ঢাকা ♦ দুর্ভোগের শেষ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সচিবালয়ে পানি থৈ থৈ

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা। রাজধানীর সচিবালয়। অঝোর ধারায় বৃষ্টি। মাত্র ১৫-২০ মিনিটে সচিবালয়ের ভিতরে পানিতে থৈ থৈ। এমনই ৬ ও ৭ নম্বর ভবনের প্রবেশ পথেও পানি উঠে যায়। এই দুই ভবনের মাঝে খোলা জায়গায় প্রায় হাঁটুপানি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনের অংশেও হাঁটুপানি জমে যায়। মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টি। থামার তিন ঘণ্টা পরও জমে থাকা পানি নামেনি সচিবালয় চত্বর থেকে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সচিবালয়ের দর্শনার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় অনেক মন্ত্রী তাদের দিনের কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হন। গতকাল দুপুরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক ছিল ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনের। পূর্বনির্ধারিত এ বৈঠক পরে বাতিল করা হয়। বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে দুই মেয়র সচিবালয় পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরের পর বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গে থমকে যায় রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো। শাহবাগ থেকে টঙ্গীগামী প্রধান সড়ক, নিউমার্কেট থেকে মিরপুরগামী সড়ক, রামপুরা বনশ্রী, পল্টন যাত্রাবাড়ীসহ প্রায় সবগুলো সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের এই রেশ চলে যায় মহল্লার ভিতরের ছোট ছোট রাস্তায়ও। এতে অফিসগামী যাত্রীদের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়ে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা। বৃষ্টির পানিতে ভিজে জবুথবু হয়ে অনেকেই ক্লাসে গেছেন। আবার কেউ কেউ ক্লাস পর্যন্ত যেতে না পেরে ভেজা শরীরে বাসায় ফেরত এসেছেন। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে যে শুধু সচিবালয়ের ভিতরেই ভোগান্তি হয়েছে তা নয়। মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই গতকাল পুরো ঢাকা শহরই তলিয়ে যায় বৃষ্টির পানিতে। এর আগে গত বুধবারও সচিবালয়ের আঙ্গিনায় থৈ থৈ পানি উঠে যায়। সেদিনও চরম ভোগান্তি পড়তে হয়। গতকাল বৃষ্টি থামার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক এলাকার পানি সরেনি। বনানী-এয়ারপোর্ট রোডে বিকাল পাঁচটার দিকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি অপসারণ করতে দেখা গেছে। অথচ বৃষ্টি থেমে যায় আড়াইটার আগেই। এক ঘণ্টার বৃষ্টি গতকাল ঢাকাবাসীকে যতটা না ভুগিয়েছে তার চেয়ে বেশি ভুগিয়েছে অসহনীয় যানজট আর জলাবদ্ধতা। অনেক জায়গায় পথচারীদের রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা এবং পাবলিক বাসের ভিতরেও মানুষকে হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও মাথার ওপরে বৃষ্টি আর রাস্তায় জমে থাকা পানিতে একাকার হয়ে মানুষ রাস্তায় হেঁটেছে। এ সময় অনেককে খোলা ম্যানহোল কিংবা গর্তের মধ্যেও পড়ে যেতে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো এলাকার ফুটপাথও ডুবে যাওয়ায় মানুষ হাঁটতে পারেনি। ফলে ভবন বা দোকানের কার্নিশে, ফুটওভারব্রিজের নিচে, চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়েও কাকভেজা হয়েছে ঢাকাবাসী। অনেকেই ভেজা কাপড়-চোপড় নিয়ে অফিস করেছেন। আবার অনেক পথচারীকে দেখা গেছে পায়ের জুতা হাতে নিয়ে হাঁটু কিংবা কোমর পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেছেন। অনেকেই অফিস পর্যন্ত পৌঁছার আগেই ভেজা জামা-কাপড় আর জুতা খুলে বাসে উঠে বাসায় ফেরত গেছেন। রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, দৈনিকবাংলা, ফকিরাপুল, পল্টন, প্রেস ক্লাব, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, মগবাজার-মৌচাক, ফার্মগেট, মানিকমিয়া এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, মিরপুর, শ্যাওড়া পাড়া, কাজী পাড়া, কারওয়ানবাজার, বাংলামটর, ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, হাতিরঝিল, রামপুরা, পুরান ঢাকার বকশীবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নিউমার্কেট, খিলগাঁও, বনশ্রী, বাসাবো, মেরাদিয়া, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, টঙ্গী, বাড্ডা, গুলিস্তানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা মানুষকে ভুগিয়েছে দিনভর। শুধু তাই নয় বিভিন্ন এলাকায় মহল্লার ভিতরের ছোট ছোট রাস্তাও তলিয়ে যায় বৃষ্টির পানিতে। এতে প্রধান সড়ক ও মহল্লার ভিতরের সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায়, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা, এমনকি রিকশাও বিকল হয়ে জনভোগান্তি বাড়িয়ে দেয় অনেক গুণ। প্রধান সড়কে যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটে পড়ে মানুষ। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শাহবাগ মোড় পার হতেই গতকাল ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। এমনকি মতিঝিল থেকে উত্তরা পাড়ি দিতে মানুষকে ব্যয় করতে হয়েছে তিন ঘণ্টারও বেশি সময়। এমন জলাবদ্ধতার জন্য ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা, খামখেয়ালি আর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন খোদ সচিবালয়ে কর্মরতরা। এ ছাড়া ভরা বর্ষা মৌসুমে রাজধানী খোঁড়াখুঁড়িও এর জন্য সমানভাবে দায়ী বলে তারা মনে করেন। কেননা একই রাস্তা সপ্তাহ কিংবা পাক্ষিকের ব্যবধানে একাধিকবার কাটা হচ্ছে। এমন কি কোনো কোনো সড়ক তিন বছর ধরে টানা খোঁড়া হচ্ছে দিনের পর দিন। এতে মাটির নিচের থাকা সার্ভিস লাইনগুলো আরও বেশি অচল হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরিই ভেঙে পড়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি নামতে সময় লেগে যায় অনেক বেশি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর