বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিক্ষোভে উত্তাল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

পরিস্থিতি সামলাতে দুই দিনের ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় তিন দিন ধরে ছাত্র বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। পরিস্থিতি সামলাতে কর্তৃপক্ষ দুই দিনের সব ক্লাস বাতিল ঘোষণা করেছে। তবে বিভিন্ন বিভাগের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা চলবে।

গত মঙ্গলবার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হলেও গতকাল তা পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। আজ কমিটি কাজ শুরু করবে। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (স্কুল অব ল) বিভাগের শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদকে এক বছরের চুক্তিতে গত বছর নিয়োগ দেওয়া হয়; যা শেষ হয়েছে। তিনি গত রবিবার আইডি কার্ড আনতে গেলে রেজিস্ট্রার ও দুই সহকারী রেজিস্ট্রারের হাতে লাঞ্ছিত হন। ধস্তাধস্তিতে ফারহান উদ্দিনের পোশাক ছিঁড়ে যায়।

এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠেন ছাত্র-ছাত্রীরা। জড়িতদের বহিষ্কার ও বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়টির দুই ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের নিচে অবস্থান নিলে মঙ্গলবার তাদের বের করে দেন কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরী। তারা এক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণও করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে বাইরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার শাহুল আফজাল, সহকারী রেজিস্ট্রার মাহিউদ্দিন ও জাভেদ রাসেলের পদত্যাগ এবং প্রহরীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। সকাল থেকে ক্যাম্পাস ভবনের গেট খোলা থাকলেও বেলা ১১টার পর তা বন্ধ করে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করতে থাকেন। মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও তা আন্দোলন দমাতে পারেনি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্তকাজ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিটি পুনর্গঠন করেছি। ছাত্রদের প্রতিনিধিও রাখা হচ্ছে। আমরা চাই সত্য বের হোক। ফারহান উদ্দিনকে গত বছর জুলাইয়ে প্রবেশন পিরিয়ডে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। তাই তাকে আর রাখা হয়নি।’ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হামিম ইসলাম বলেন, ‘রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ ও ফারহান উদ্দিন আহমেদ স্যারের চাকরি পুনর্বহাল করার দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজ ‘পুসাব’ থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের পরিস্থিতি জানাচ্ছেন। পরবর্তী কর্মসূচির কথাও বলা হচ্ছে এখান থেকে। এদিকে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিস বোর্ডে জানানো হয়, সংকট সমাধান ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দুই দিন (২ ও ৩ আগস্ট) ক্লাস বন্ধ থাকবে। তবে বিভিন্ন বিভাগের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা হবে। পুনর্গঠিত তদন্ত কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড নাচারাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম ইউসূফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাজদিন হাসান রয়েছেন। ছাত্রদের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধিকে সদস্য রাখার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষক ফারহান উদ্দিন আহমেদের চুক্তি শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নীতিমালা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, তা নিরূপণ করতেও বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।

সর্বশেষ খবর