বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অজানা অধ্যায়

জাতীয় ঐক্য থাকলে বঙ্গবন্ধুকে এভাবে জীবন দিতে হতো না

—অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐক্য থাকলে বঙ্গবন্ধুকে এভাবে জীবন দিতে হতো না

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সাবেক তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী নীলনকশা করেছিল। দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে তারা বঙ্গবন্ধু সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কাজে সহযোগিতা করেছে দেশের ভিতরের মৌলবাদী গোষ্ঠী। জাসদের কাঁধে ভর করে পাঁচজন এমপিকে হত্যাসহ বিভিন্ন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি দুর্বল থাকায় ষড়যন্ত্রকারীর দোসররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস দেখিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয় চায়নি। কারণ, ওই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে তারা ভারসাম্যমূলক অবস্থানে ছিল। এ সময় আমেরিকা এবং চীনের আঁতাতের ফলে নতুন ধরনের যে রাজনৈতিক মেরুকরণ হতে যাচ্ছিল স্বাভাবিকভাবেই তখন সোভিয়েত এবং ভারত আরেকটি ব্লক তৈরি করতে চাচ্ছিল। আর এই সময়েই শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বিষয়ে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পরাক্রমশালী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয় মানে আমার কূটনৈতিক পরাজয়। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বলেছিলেন, আমি কখনই বাংলাদেশ হতে দিব না। আবার এর মধ্যে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল, উগ্র চীনপন্থি গোষ্ঠী স্বাধীন বাংলাদেশের পরিপন্থী ছিল। তাই বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো তখন অনেকগুলো পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে হয়। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ, লাখো মানুষ গৃহহারা, খাবার নাই, অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এদিকে জাতির পিতা তখনো পাকিস্তানের কারাগারে। তিনি ফিরলেন এবং আস্তে আস্তে তার ক্যারিশমা দিয়ে ধ্বংস স্তূপের মধ্য থেকে রাষ্ট্রগঠন শুরু করলেন। তিনি দেশের সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সীমানা চুক্তিতে বসলেন এবং সবচেয়ে অবাক লাগে তিনি তখন সমুদ্রসীমা বিষয়ে চুক্তির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং হেনরি কিসিঞ্জার বিষয়ে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭৪ সালে সিআইএ সোর্সদের বুস্টারের নেতৃত্বে কাজের অর্ডার দিয়ে গিয়েছিলেন। বুস্টার এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্যাপারে মুখ খোলেননি। কিসিঞ্জারের তিনজন শত্রুর মধ্যে একজন ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিসর ছিল দেশীয়-আন্তর্জাতিক। এর মধ্যে দেশের মৌলবাদী শক্তি জাসদের কাঁধে ভর করে চারদিকে অরাজকতা তৈরি করল। একদিকে দেশে খাদ্য সংকট অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বঙ্গবন্ধু সরকারকে চাপে ফেলল। তখন আমেরিকা, পাকিস্তান আর তাদের দেশের দোসররা মিলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নীলনকশা পূরণ করল। তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা এখন একে অপরকে দোষারোপ করেন। কিন্তু জাতীয় ঐক্য থাকলে, সবাই এক কাতারে থাকলে বঙ্গবন্ধুকে এই দেশে ঘাতকরা কখনো হত্যা করতে পারত না। সামরিক অর্ডিন্যান্স জারি হওয়ার পরে কোনো গণমাধ্যম তাদের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর মতো মানুষকে কেউ এভাবে হত্যা করতে পারে এটা আমরা ভাবতে পারিনি। রাজনীতির সবচেয়ে বড় বিষয় সাহস। সাহস আসে সততা, নৈতিকতা থেকে। সামরিক বাহিনীর কেউই তখন আমাদের পক্ষে ছিল না। সশস্ত্র অভ্যুত্থানকে রুখতে গেলে সশস্ত্র বাহিনীর কিছুটা সহযোগিতা না থাকলে সম্ভব না। আমরা কিছু অস্ত্র এনে চেষ্টা করেছিলাম। আমরা প্রথম সার্থক প্রতিরোধ করেছিলাম খন্দকার মোশতাককে সংসদে স্বীকৃতি না দিয়ে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হককে নির্বাচন করেছিলাম। তিনি বঙ্গভবনে গিয়েই বলেছিলেন, আমি আপনাকে মোশতাক ভাই বলেই সম্বোধন করতে চাই। কারণ, আপনি বৈধ রাষ্ট্রপতি না। সবাই তখন নড়েচড়ে বসেছিল, যে মোশতাকের ঘরের আঙিনা পার্লামেন্টেই তার পক্ষে নেই। এখান থেকে আস্তে আস্তে প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর