রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওয়াদা করছি খাদ্যের অভাব হবে না

গাইবান্ধা ও বগুড়ায় বন্যাদুর্গতদের প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি

ওয়াদা করছি খাদ্যের অভাব হবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বানভাসি মানুষের পাশে আছি। যেখানেই বন্যা সেখানেই আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বন্যার পূর্বাভাস অনুযায়ী সরকার আগেই সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে, যাতে খাদ্যের অভাবে একজন মানুষও কষ্ট না পায়।’ গতকাল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ ও ধানের চারা বিতরণ করতে এসে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যায় মানুষের যে ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে তা তৈরি করে দেওয়া হবে। ভূমিহীনদের জমি দেওয়া হবে। আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত কেউ যেন খাবার কষ্টে না ভোগেন, সেজন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক কোটি দরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হবে। এ ছাড়া ভিজিডি, ভিজিএফের চালও দেওয়া হবে।’ দেশের ২১টি জেলার ফসল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যাপরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা জমির চারা বিতরণ করা হবে। যেখানে আমন ধান হবে না সেখানে অন্য ফসল উৎপাদনের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হবে। বীজ, কীটনাশক, সারসহ অন্যান্য উপকরণও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বন্যায় যেসব কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে তাদের পর্যাপ্ত কৃষিঋণ দেওয়া হবে। ওইসব এলাকায় কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণের সুদ আদায় করা হবে না। যারা আগে ঋণ নিয়েছিলেন, তাদেরও নতুন করে ঋণ দেওয়া হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনা জামানতে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যায় যেসব স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। যাদের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে, তাদের নতুন বই দেওয়া হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ সালে তাণ্ডব করেছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে না এসে ভুল করেছিল। তারা রাস্তাঘাট, গাছ কেটে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জেও তাণ্ডব চালিয়েছে। সুন্দরগঞ্জের এমপি লিটনকে হত্যা করেছে। আমরা তৈরি করি আর তারা ধ্বংস করে।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনা করতে এসে নিজেরা বিত্ত-বৈভবে বড় হতে চাই না। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না।’ অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবীসহ সবাইকে সন্ত্রাস, জঙ্গি, মাদক সমস্যা মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখবেন, তারা যেন বিপথে না যায়।’ গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।

আগুনসন্ত্রাস চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত : বগুড়া প্রতিনিধি জানান, সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার উত্খাতের নামে আগুনসন্ত্রাস চালিয়েছে। হাজার হাজার গাছ কেটেছে। নির্বাচন ঠেকানোর নামে তাণ্ডব চালিয়েছে। আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা ছাড়া কিছু জানে না বিএনপি-জামায়াত জোট।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ ভালো থাকে। বিনা পয়সায় বই, চিকিৎসা পায়, কর্মসংস্থান, হয়। নৌকা ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাবা জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন, দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছেন। সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার কাজ। আমি আমার মা-বাবা, ভাই-বোনদের হারিয়েছি। আমি আপনাদের মাঝে তাদের খুঁজে পাই।’ বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। পরে প্রধানমন্ত্রী সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ অডিটোরিয়ামে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

সর্বশেষ খবর