রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘর থেকে বেরোলেই দুর্ভোগ

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, মহাসড়কে গাড়ির চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল আজহার মূল যাত্রা শুরুর আগেই রাজধানী থেকে বেরোতে যানজটের দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজটের কারণে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। মহাসড়কে গাড়ির চাপ, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও পণ্যবাহী গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় এই দুই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ঈদযাত্রায় মহাসড়কের কোনো কোনো স্থানে দুর্ভোগ হতে পারে— এমন আশঙ্কায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব স্থান পরিদর্শন করছেন। কিন্তু যানজটে আটকে মানুষের কষ্ট দূর হচ্ছে না। তবে কিছু পদক্ষেপের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে গতকাল যানজটের ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে দিনভর যানজটের পর বিকালের দিকে যান চলাচলে গতি আসে। এদিকে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের  ২৪ ঘণ্টা রাস্তায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণ দেখিয়ে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। গতকাল কুমিল্লায় সওজ চট্টগ্রাম বিভাগের প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেতুমন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে সড়ক বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। এদিকে মন্ত্রীর সফরের সময় পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রকৌশলীরা দাবি করেছেন, ঈদে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি এবং যানবাহন বিকল হওয়ার কারণে যানজট হচ্ছে। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, আগামী সোমবার থেকে ঈদের মূল যাত্রা শুরু হবে। তাই এখনো ঈদের চাপ পুরোপুরি শুরু হয়নি। ঢাকামুখী কোরবানির পশুবাহী যানবাহনও তেমনভাবে আসা শুরু হয়নি। এখনকার যানজটের মূল কারণ সড়কের খানাখন্দ। কিছু কিছু স্থানে খানাখন্দ মেরামতের কারণেও যানবাহনের গতি কমে জট হচ্ছে। সেতুর টোল আদায়ে ধীরগতি ও ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে হয়রানিও বড় কারণ। মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা ছাড়লেই যানজটে পড়ছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। ঈদযাত্রা শুরুর অনেক বাকি থাকলেও মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ হয়েছে যানবাহনের সারি। কয়েক দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজট তীব্র হয়েছে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে গতকাল সকাল থেকে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। গজারিয়ার মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ঢাকামুখে একেকটি যানবাহনকে ওই ১৩ কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগছে। এই রুটে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ ওজন স্কেল এবং সেতুর টোল আদায়। পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের সময় অতিরিক্ত পণ্য নিলে স্কেল কর্তৃপক্ষ ট্রাক মহাসড়কে থামিয়ে রেখে বাড়তি টাকা আদায় করে। চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রাকের চালক মো. রফিকুল ইসলাম ঢালী বলেন, ওভারলোড নিয়ে ট্রাক চালালে এই স্কেলে বাড়তি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই টাকা আদায়ের জন্যই রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে মেঘনা সেতুতে কাজ চলার কারণে এবং মহাসড়কটি চারলেন হলেও মেঘনা সেতুতে ওয়ানওয়ে হওয়ায় মেঘনা ব্রিজের কাছে এসে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক সময় রাস্তার ওপরে কোনো যানবাহন বিকল হলে তা অপসারণের আগ পর্যন্ত সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা যায়। মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুর রহমান মজুমদার জানান, ঈদ সামনে রেখে বুধবার রাত থেকেই ঢাকামুখে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ শুরু হয়। এরপর থেকে গজারিয়া অংশের ওই ১৩ কিলোমিটার সড়কে যানজট শুরু হয়। সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মেঘনা টোলপ্লাজা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। শুক্রবার ভোর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটে স্থবির ছিল এই এলাকা। নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিল পরিবহনের দীর্ঘ সারি। মাথার ওপর তীব্র খরতাপ। ভ্যাপসা গরম। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থা ছিল ঘরমুখো মানুষের। সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যানজটের কবলে পড়ে নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা। বিকালের দিকে যানজটের মাত্রা একটু কমলেও সন্ধ্যায় আবারও তা শুরু হয়। এ সময় ঘর ফেরত কর্মজীবী নারী-পুরুষরা পড়েন বিপাকে। সকালে মেঘনা টোলপ্লাজা থেকে মোগরাপাড়া, টিপরদী, মদনপুর, কাঁচপুর অভিমুখী গণপরিবহনের কোনোটিই সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। ঢাকা-বাইপাস এলাকায়ও ছিল একই চিত্র। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) তৈয়বুর রহমান জানান, মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় কয়েকটি গাড়ি বিকল হওয়ার কারণেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের প্রচেষ্টায় দুপুরের পর পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী একাধিক ট্রাক মেঘনা ব্রিজে উঠতে গিয়ে বিকল হয়ে পড়ে, ট্রাকগুলো সরাতে গিয়ে যানজট লেগে যায়। টানা কয়েক দিন এ সমস্যা হলেও শুক্রবার রাত থেকে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি উন্নতি হয়। রাতে অনেক স্থানে মালবাহী দুর্বল গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া টোলপ্লাজায় বুথ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কুমিল্লা অংশে হঠাৎ যানজট না থাকায় খুশি চালক ও যাত্রীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর