রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রতারণার শিকার আড়াই হাজার হজযাত্রীর সৌদি যাত্রা অনিশ্চিত

মোস্তফা কাজল

প্রতারণার শিকার হয়ে আড়াই হাজার হজযাত্রীর সৌদি যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব হজযাত্রীর ই-ভিসা হলেও টিকিট হয়নি। এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীর প্রতারণার কারণে এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রী ভোগান্তি এবং প্রতারণার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হজ এজেন্সিগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে। আর মাঝে পড়ে পিষ্ট হচ্ছেন হজযাত্রীরা। ইতিমধ্যে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অন্তত তিন শতাধিক হজযাত্রী। যাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব বলছে, যেসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে হজ শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে গতকাল রাতে হজযাত্রী পরিবহনে সৌদি সরকার বাংলাদেশ বিমানকে বাতিল হওয়া হজ ফ্লাইট পরিচালনায় ১২ হজ ফ্লাইটের শ্লট বরাদ্দ করেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশ থেকে হজ ভিসা ও টিকিট পাওয়া একজন হাজীরও হজ পালনে কোনো বাধা থাকল না। গতকাল রাতে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট। এদিকে গতকাল বিকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। হজ ফ্লাইট বাতিলের এ খবরে আশকোনা হাজী ক্যাম্পে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় বিক্ষোভ। পরে হজ অফিস ও হাব নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সেখানে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিয়ে বিমানের ৩০টি ও সৌদি এয়ারলাইনসের ৪টিসহ ৩৪ হজ ফ্লাইট বাতিল হলো। আজ সৌদি এয়ারলাইনসের শেষ হজ ফ্লাইট ঢাকা ছাড়বে।   গতকাল পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জেদ্দার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গতকাল আরও অতিরিক্ত তিনটি হজ ফ্লাইটের শ্লট বরাদ্দের আবেদন করেছে। হজ অফিস সূত্র জানিয়েছে, বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইনসের বাতিল ফ্লাইটের এখনো প্রায় দুই হাজার হজযাত্রী আটকা পড়েছেন। এদিকে ভিসা ও টিকিট নিয়ে হাজী ক্যাম্পে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ৫ হাজার ৬০০ হজযাত্রী। অপেক্ষমাণ হজযাত্রীরা আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়ি ও হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করে চরম হতাশা ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। হজে যেতে না পারা হজযাত্রীদের অভিযোগ, কয়েকটি হজ এজেন্সির ঢিলেমি এবং শেষ সময়ে পাঠানোর আশায় অনেক হজযাত্রীর টিকিট আগে কেনা হয়নি। হজ ফ্লাইটের ৯৯৩ জনের ভিসা হয়নি। হজ অফিস ও হাব বলছে, হজ এজেন্সির নিয়োগকৃত গ্রুপ লিডারদের প্রতারণার কারণেও বহু যাত্রীর টিকিট কেনা এখনো শেষ হয়নি।

এদিকে অভিযোগের পাহাড় জমছে হজ অফিস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। শেষ মুহূর্তে রাজধানীর আশকোনার হাজী ক্যাম্পে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে হজ গমনেচ্ছুরা জড়ো হচ্ছেন। তারা বিভিন্ন এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করছেন। অনেকের অভিযোগ, হজ এজেন্সিকে টাকা দিয়েও ভিসা ও টিকিট পাননি। কারও অভিযোগ, এজেন্সি যোগাযোগ করছে না। একজন মোয়াল্লেমও এসেছেন একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে। হজ অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, অসংখ্য অভিযোগ। গতকালই প্রায় ৩০০ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে টাকা নিয়েছে, অথচ ভিসা হয়নি। ভিসা হয়েছে, টিকিট হয়নি। ভিসা টিকিটের কথা বলে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এখন তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এজেন্সির অফিস বন্ধ। ফোন বন্ধ-এমন অভিযোগ বেশি।  গতকালও হজ অফিসে এসে প্রতারিত কয়েকজন হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তাদের অভিযোগ, নিবিড় নামে একটি হজ এজেন্সি সুস্থ হজযাত্রীকে অসুস্থ দেখিয়ে অন্য ব্যক্তিকে রিপ্লেসমেন্ট করে হজে পাঠিয়েছে। এ রকম প্রায় ৪০ জনকে রিপ্লেসমেন্ট করে এবার হজে পাঠিয়েছে ওই এজেন্সি। হাজী সংগ্রহকারী আজিজুল হাকিম মতিন হজ অফিসে অভিযোগ করেছেন, তিনি এবার ৮৭ জন হজযাত্রী সংগ্রহ করেছেন। নিবিড় হজ ওমরাহ অ্যান্ড ট্যুরিজম এবং ক্লাব ট্রাভেলসের মাধ্যমে তাদের নিবন্ধন করা হয়। এই দুই এজেন্সিকে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধও করেছেন তিনি। কিন্তু ধোঁকা দিয়েছে এজেন্সি। মাত্র ৩৩ জন হজযাত্রীকে সৌদি পাঠিয়ে উধাও হয়েছে হজ এজেন্সির লোকজন। কোটাবঞ্চিত একটি হজ এজেন্সির এক কর্মকর্তা বলেন, এবার শুরু থেকেই হজযাত্রীরা প্রতারণা ও ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। প্রথমে নিবন্ধন নিয়ে দুর্নীতি। এরপর ই-ভিসা জটিলতা। সময়মতো ভিসার জন্য আবেদন না করা। মোয়াল্লেমের সঙ্গে এজেন্সিগুলোর বিলম্বে চুক্তি। মক্কা ও মদিনায় সময়মতো বাড়িভাড়া না করা। ভিসা ‘লজমেন্ট’ ও ই-মেইলের মাধ্যমে ‘ মোফা’ সেন্ড (পাঠানো) করতে বিলম্ব করা। শেষ মুহূর্তে এসে ফ্লাইট বিপর্যয়। বহু হজযাত্রীর কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে অনেক হজ এজেন্ট ও তাদের মধ্যস্বত্বভোগীরা। ভিসার কথা বলে অন্তত দেড় হাজার হজ গমনেচ্ছুর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভিসার জন্য আবেদনই করেনি সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো। জানা গেছে, ভিসাপ্রাপ্ত অনেক হজযাত্রীকে সৌদি পাঠাতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি মালিকরা টালবাহানা করেন। তারা সময়মতো হজযাত্রীদের টিকিট কাটেননি।

সর্বশেষ খবর