শিরোনাম
সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

মনোনয়ন যুদ্ধে নবীন-প্রবীণ

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি


মনোনয়ন যুদ্ধে নবীন-প্রবীণ

রাজধানীসহ সারা দেশের মতো একাদশ জাতীয় নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে ঢাকা-১৫ (কাফরুল-মিরপুরের একাংশ) আসনেও। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে এ আসনটি গঠিত। জাতীয় সংসদের ১৮৮ নম্বর আসনটিতে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। কার্যত লড়াই হবে এই প্রধান দুই দলেই। এ আসনে মনোনয়ন নিয়ে যুদ্ধ হবে নবীন-প্রবীণে। তবে দুই দল থেকেই এবার নতুন মুখও আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরেও নতুন করে শুরু হয়েছে তৎপরতা। অনেকেই এরই মধ্যে পোস্টার ও ব্যানার টাঙিয়ে শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে জানান দিচ্ছেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের খুব একটা দেরি নেই। অবশ্য আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে অন্য কোনো দলের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

আওয়ামী লীগ : ঢাকা-১৫ (কাফরুল) আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। ঢাকা মহানগরের একসময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতার বয়সের ছাপ পড়েছে। নৌকা নিয়ে একাধিকবার এমপিও হয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা নিয়ে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তার আগে মনোনয়ন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে নিজ দলের তরুণ নেতাদের সঙ্গে। প্রবীণ এ রাজনীতিকের সঙ্গে এবার মনোনয়ন চান ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এন সাইফুল্লাহ সাইফুল এবং কাফরুল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর জামাল মোস্তফাসহ আরও অনেকেই। সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে বা ব্যক্তি উদ্যোগে নির্বাচনী এলাকায় জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন, প্লাকার্ডে জানান দিচ্ছেন নিজেদের অবস্থান। বিভিন্ন ঈদ, পার্বণসহ জাতীয় শোক দিবসে পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। তাই এখানে ভোটারদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের টিকিট। নবীন আর প্রবীণের মনোনয়ন লড়াইয়ে কে জিতবে সেটাও তাদের দেখার কৌতূহল। তবে প্রার্থীরা সবাই নিজেদের জনপ্রিয় বলে মনে করেন। একাদশ নির্বাচনে নৌকার টিকিট দেওয়া হলে আসনটিতে পুনরায় তারা বিজয়ী হতে পারবে বলে জানিয়েছেন। বর্তমান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার হজ পালনে পবিত্র মক্কায় রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর, নৌকার কথা বলতে গিয়ে অনেক জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করেছেন। নৌকা নিয়ে একাধিকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা উপহার দিলে এবারও নির্বাচন করব। জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ। কারণ আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় চাঁদাবাজ, মামলাবাজ কিংবা টেন্ডারবাজদের প্রশ্রয় দিইনি।’ মনোনয়ন প্রসঙ্গে যুবলীগ উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। নৌকার জয়ের জন্য আশা করি, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি। চেষ্টা করেছি মানুষের ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে। তবে দল এ আসনে যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন তার পক্ষে কাজ করব। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা কখনো প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেন না।’ সাবেক ছাত্রনেতা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, ‘তরুণরাই আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। সেজন্য তরুণ প্রার্থী হিসেবে আমি নৌকার টিকিট পাব বলে আশা রাখি। তিনি বলেন, আগামীতে নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই নৌকা দিক না কেন আমরা তার পক্ষেই সম্মিলিতভাবে কাজ করব।’ কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা বলেন, ‘দীর্ঘদিন এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছি। মনোনয়ন চাইব। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মেনে নেব।’

বিএনপি : ঢাকা-১৫ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী ছাড়াও জোটের একজন প্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন— বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান ও জোটের শরিক দল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী ছিলেন উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খান। তার মৃত্যুতে এ আসনটি প্রার্থী শূন্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে এ আসনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ওই আসনে নির্বাচন করতে পারেন। আলালের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, দলের হাইকমান্ড থেকে তাকে ওই আসনে কাজ করতে বলা হয়েছে। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এমনটা নিশ্চিত করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দলের হাইকমান্ড থেকে তাকে এ আসনে কাজ করতে বলা হয়েছে। চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। আলোচনায় রয়েছে, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে বরিশাল উজিরপুরে তার নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এর আগে তিনি ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই আসনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নাম আলোচনায় এলেও গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তা নাকচ করে দেন তিনি। রিজভী আহমেদ বলেন, ‘ঢাকার কোনো আসন থেকেই নির্বাচন করার ইচ্ছা আমার নেই।’ তবে ওই আসনে শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় রয়েছেন যুবদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। তিনি এরই মধ্যে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ইতিবাচক বার্তা নিয়েই এ আসনে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়াও এ আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয়  জোটের শরিক  লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার দাবি, বিএনপির হাইকমান্ড তাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। এরপর থেকে তিনিও নিজের মতো করে এ আসনে গণসংযোগ শুরু করেছেন। মামুন হাসান মিরপুরের আদি বাসিন্দা হলেও ডা. ইরানের বাড়ি পিরোজপুরে। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় দুই শতাধিক মামলার আসামি মামুন হাসান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সিনিয়র নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই আমি নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব। তবে বহিরাগত কাউকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয়রা তা মানবে না।’ এ প্রসঙ্গে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘বিএনপি জোটের সঙ্গে ১২ বছর ধরে আছি। সরকারি দলের হামলার শিকার হয়েছি। একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছি। জোটের পক্ষ থেকে আমি এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করি।’

 

সর্বশেষ খবর