শিরোনাম
সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

গোপালগঞ্জে স্কুলছাত্রী ধর্ষণের মীমাংসা শালিসে!

বরগুনায় খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

প্রতিদিন ডেস্ক

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা তিন লাখ টাকায় শালিসে মীমাংসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোটালীপাড়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান লক্ষ্মী রানী সরকার শনিবার বিকালে উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়নের শুয়াগ্রামে শালিস বৈঠক বসিয়ে ঘটনার মীমাংসা করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই মেয়ের বাবা। পরে শনিবার রাতে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে মামলা করার পর এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খবর বিডিনিউজের। শুয়াগ্রাম বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ১৫ আগস্ট ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই গ্রামের খোকন বৈদ্যর ছেলে অনিক বৈদ্য, রামগোবিন্দ বৈদ্যর ছেলে দীপংকর বৈদ্য, নির্মল বৈদ্যর ছেলে রনি বৈদ্য ও তারন বৈদ্যর ছেলে শিমুল বৈদ্যর বিরুদ্ধে। শালিসে অনিককে ৭৫ হাজার, দীপংকরকে ৭৫ হাজার, রনিকে ৫০ হাজার, শিমুলকে ৫০ হাজার ও বিমল বৈরাগীর ছেলে তমাল বৈরাগীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শালিসের কথা স্বীকার করে লক্ষ্মী রানী বলেন, ‘তাত্ক্ষণিকভাবে টাকা আদায় করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরার কাছে তা গচ্ছিত রাখা হয়েছে।’ তবে টাকা গচ্ছিত রাখার কথা অস্বীকার করে মতিয়ার বলেন, ‘শনিবার বিকালে শালিস বৈঠকে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উদ্যোগ সফল হয়নি।’ ঘটনা মীমাংসা হলে রাতে থানায় মামলা হতো না এবং পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করত না বলে দাবি করেন তিনি। শনিবার গভীর রাতে ছয়জনকে আসামি করে মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন বলে জানান কোটালীপাড়া থানার এসআই শাহাদৎ হোসেন। আসামিরা হলেন অনিক বৈদ্য, দীপংকর বৈদ্য, রনি বৈদ্য, শিমুল বৈদ্য, তমাল বৈরাগী ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শিশির বিশ্বাসের ছেলে সুমন বিশ্বাস (২০)। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় শুয়াগ্রাম মন্দির থেকে নামকীর্তন শুনে বাড়ি ফেরার পথে শুয়াগ্রাম সেতুর কাছে নির্জন স্থানে নিয়ে অনিক বৈদ্যর নেতৃত্বে আসামিরা দল বেঁধে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার অসম্মতিতে শনিবার বিকালে বৈদ্যবাড়ীর শালিস বৈঠকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। পরে রাতে আমি বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় মামলা করি।’ আসামি অনিকের বাবা খোকন বৈদ্য শালিস বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সামাজিকভাবে বিষয়টি আমরা মীমংসা করেছি। জরিমানার টাকা তাত্ক্ষণিকভাবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরার কাছে জমা দিয়েছি। এরপরও কেন মামলা হলো বুঝতে পারছি না।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদৎ বলেন, ‘ধর্ষণ ঘটনা শালিস বৈঠকে মীমাংসা করার কথা শুনেছি। এ ধরনের অপরাধের বিচার শালিস বৈঠকে করার সুযোগ নেই। এ ঘটনায় শনিবার রাতে মামলার পর অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি অনিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’ শিগগিরই ওই ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে বলে তিনি জানান।

খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন: বরগুনার বামনা উপজেলার পূর্ব সফিপুর গ্রামের মৃত আদম মল্লিকের পুত্র মো. ইউনুসকে (৩৫) বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে বড়ভাই মো. ইসমাইল (৪২) ও তার সহযোগীরা। এ সময় বড় ভাইয়ের স্ত্রী পারুল বেগম মলমূত্র বোতলে ভরে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এ ঘটনায় ইউনুসের বড় ভাইয়ের ছেলে সোহাগকে এলাকাবাসী আটক করে বামনা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। এদিকে মূল নির্যাতনকারী বড় ভাই ইসমাইল গতকাল সকালে বরগুনা কোর্টে হাজির হলে বিচারক তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকালে উপজেলার পূর্বসফিপুর গ্রামে। গতকাল পূর্ব সফিপুর গ্রামে প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ইউনুস কথিত ফকির হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ইউনুসের বড় ভাই মো. ইসমাইল মনে করে তাকে এবং তার স্ত্রী পারুল বেগম  ও পুত্র সোহাগকে জাদুটোনা করে ক্ষতি সাধন করেছে ইউনুস। এ অভিযোগ এনে ইসমাইল, ছেলে সোহাগ ও স্ত্রী পারুল বেগম শুক্রবার বিকালে ইউনুসকে ধরে বাড়ির সম্মুখের বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। এ সময় পারুল বেগমের প্রস্রাব ও পায়খানা বোতলে ভরে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা চালায় নির্যাতনকারীরা। এতে ইউনুস গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বামনা হাসপাতালে ভর্তি করে। ইউনুস বামনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসাধীন ইউনুস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার ওপর যে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে তার সাক্ষী এলাকাবাসী। তিনি অভিযোগ করেন, আমার ওপর নির্যাতনের কথা পুলিশকে জানালে তারা মামলা নিয়েছে। কিন্তু যাদের আসামি দিয়েছি তাদের সবাইকে আসামি করেনি। বড় ভাইয়ের বউ আমাকে মলমূত্র খাওয়াতে এলেও তার বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি।  আমার ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। এদিকে, বামনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বে নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ আলামত হিসেবে লাঠি, রশি ও ব্যবহূত বোতল জব্দ করে। সোহাগ পালিয়ে যাওয়ার সময় পূর্বসফিপুর এলাকা থেকে এলাকাবাসীরা আটক করে বামনা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহাবুদ্দিন জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতনের মালামাল জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ইসমাইল ও সোহাগকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। সোহাগকে শনিবার সকালে কোর্টের মাধ্যমে বরগুনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে ও অপর আসামি ইসমাইল বরগুনার আদালতে হাজির হলে আদালতের বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠান।

 

সর্বশেষ খবর