শিরোনাম
সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

পীরবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় খাদেমকে হত্যা করে জঙ্গিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

রংপুরে মাজারের খাদেম রহমত আলী (৬০) হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুরে রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের আদালতে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম সাক্ষ্য দেন। তিনি খাদেম রহমত আলীর ছেলে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা জানান, খাদেম রহমত আলী পীরবাদের তরিকায় বিশ্বাসী ছিলেন বলেই জঙ্গিরা তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে বলে বাদী আদালতকে জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাদী সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেন, তাদের বাড়ির কাছে তার দাদা আবদুস সাত্তারের নামে মাজার শরিফ আছে। রহমত আলী ওই মাজারের খাদেম ছিলেন। এ ছাড়া রহমত আলী কেরানীগঞ্জের বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী নামে এক পীরেরও মুরিদ ছিলেন। আবদুস সাত্তারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর ওই মাজার প্রাঙ্গণে ওরশ শরিফের আয়োজন করা হয়। পীরবাদের তরিকায় বিশ্বাসী হওয়ায় এবং মাজারে ওরস শরিফের আয়োজন করায় স্থানীয় কয়েকজন জামায়াত নেতা এবং জঙ্গিরা তা বন্ধ করার জন্য খাদেম রহমত আলীকে একাধিকবার ভায়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন। তা উপেক্ষা করে ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওই মাজার প্রাঙ্গণে ওরস শরিফের আয়োজন করা হচ্ছিল। ওরস অনুষ্ঠানের ১১ দিন আগেই খাদেমকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। সাক্ষ্য শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেন। পরে আদালত আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন। ওই দিন পাঁচজনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে বলে আইনজীবী রথীশ জানিয়েছেন। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের চৈতার মোড়ে মাজার শরিফের খাদেম রহমত আলী ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার সময় কতিপয় দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে রহমত আলীকে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যার ৩৮ দিনের মাথায় খুন হন খাদেম রহমত আলী।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মামুন অর রশীদ গত বছর ৩ জুলাই জেএমবির রংপুর আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রীসহ ১৪ জেএমবি সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ১৬ আগস্ট রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির ১২ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তবে মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত দুই আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে বাইক হাসান এবং সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় আদালত তাদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন জেএমবির রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী (৩৩), ওই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ইছাহাক আলী (৩৪), লিটন মিয়া ওরফে রফিক (৩২), সাখাওয়াত হোসেন (৩০), আবু সাঈদ (৩০), তৌফিকুল ইসলাম সবুজ (৩৫), সারোয়ার হোসেন সাবু ওরফে মিজান (৩০), সাদাত ওরফে রতন মিয়া (২৩) ও জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী (২৬)। এরা কারাগারে আছেন। অপর তিন আসামি জেএমবি সদস্য চান্দু মিয়া (২০), রাজীবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে বাঁধন (২৫) ও বাবুল আখতার ওরফে বাবুল মাস্টার (৩৫) পলাতক। তাদের গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

 

সর্বশেষ খবর